কলকাতা : জল্পনার অবসান। তৃণমূলে যোগ দিলেন মুকুল রায়। ২০১৭ সালে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দল ছেড়েছিলেন তিনি। যোগ দেন বিজেপিতে। এরপর আজ 'ঘর ওয়াপসি' হল মুকুলের। পুরানো দলে ফিরলেন 'চাণক্য'। তাঁর সঙ্গে আজ তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন হয় পুত্র শুভ্রাংশু রায়েরও।


২০১৭ সালে তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল। লোকসভা ভোটের দুবছর আগে। তার আগে রাজ্যসভায় পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পরে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করেছিলেন, দলে পরিবারতন্ত্র চলছে। কাজ করা সম্ভব নয়। এর পরই মুকুলকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল।


মুকুলের দলত্যাগের পর তৃণমূল সাংগঠনিক দিকে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। কারণ, একসময় তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' দলের সাংগঠনিক দিকের একটা বড় অংশ সামলাতেন। কাজেই তাঁর দলত্যাগে প্রভাব পড়বে বলে যুক্তি ছিল তাদের। যদিও গত বিধানসভা নির্বাচনে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। মমতা ক্যারিশ্মা কার্যত অক্ষুণ্ণ, তার প্রমাণ মেলে। একসংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন হয় তৃণমূলের।


গত বিধানসভা নির্বাচনে মুকুল রায়ের সাংগঠনিক ক্ষমতাকে সেভাবে কাজে লাগায়নি বিজেপি। এমনটাই বলছে ওয়াকিবহাল মহল। শুধুমাত্র কৃষ্ণনগর উত্তর লোকসভা আসনে প্রার্থী করা হয় তাঁকে। এতে তিনি খুব একটা রাজি ছিলেন না বলে খবর। তাছাড়া, বিজেপিতে শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব বৃদ্ধিতেও অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে জল্পনা শুরু হয়। কয়েকদিন আগে বিধানসভা ভোটে জয়ের পর শপথ নিতে বিধানসভায় আসেন মুকুল রায়। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ সুব্রত বক্সীর সঙ্গে। সেই সময় বিধানসভায় নতুন বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু সেই বৈঠকে যোগ না দিয়েই বিধানসভা থেকে চলে যান মুকুল। বলেছিলেন, “আমি এখন কিছু বলব না। যখন বলার হবে, তখন সাংবাদিকদের ডেকে নেব। মানুষের জীবনে এমন দু’একটা দিন আসে, যখন মানুষকে চুপ থাকতে হয়।”


এর ফলে মুকুল রায়ের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। কিন্তু, সঙ্গে সঙ্গে ট্যুইট করে তিনি লেখেন,‘রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে বিজেপি-র সৈনিক হিসেবে আমার লড়াই চলবে। আমি সকলকে কল্পনা আর অনুমান বন্ধ করার অনুরোধ করছি। আমার রাজনৈতিক পথ নিয়ে সংকল্পে অবিচল আমি’।


এরই মধ্যে দিনকয়েক আগে মুকুলের অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে জল্পনা আরও জোরাল হয়। এর পাশাপাশি শুভ্রাংশু রায় ঘুরিয়ে বিজেপিতে আত্মসমালোচনার পরামর্শ দেন। এইসব ঘটনাক্রম মুকুলের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের পথ পরিষ্কার করে দেয়। আজ দুপুর আড়াইটা নাগাদ তৃণমূল ভবনে পৌঁছে যান মুকুল রায়। তার আগেই ২টো ৫মিনিট নাগাদ অবশ্য হাজির হয়ে যান তৃণমূল নেত্রী। তার পর একপ্রস্থ আলোচনা শেষে তৃণমূলে ফেরেন মুকুল।


জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিরোধী দলের কাছে তাঁর নেতৃত্বের গুরুত্ব গত বিধানসভা নির্বাচনে ফলাফলের পর আরও বেড়ে গিয়েছে। তৃণমূলের জয়লাভের পর এসপি, শিবসেনা, আরজেডি অধিকাংশ দলের কাছ থেকেই শুভেচ্ছাবার্তা আসে। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের আরও বিস্তারই লক্ষ্য তৃণমূল সুপ্রিমোর। সেক্ষেত্রে সংগঠনকে আরও মজবুত করা দরকার। আর এক্ষেত্রে মুকুলের বিকল্প সত্যিই কম। কাজেই তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়াটা তৃণমূলের ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল।