সুনীত হালদার, হাওড়া:  রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের গতকালের ফেসবুক পোস্টের পর এবার ডোমজুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার। আজ সকালে সলপ বাজার এলাকায় তৃণমূলের নামে ওই পোস্টার দেখা যায়। পোস্টারে লেখা, বিশ্বাসঘাতক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেন দলে ফেরানো না হয়।


ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমজুড় থেকে বিজেপির প্রার্থী হলেও ভোটে পরাজিত হন। এরপর গতকাল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেসুরো ট্যুইট ঘিরে জল্পনা ছড়ায়। এনিয়ে তৃণমূলের হাওড়া জেলা সদরের চেয়ারম্যান অরূপ রায়ের কটাক্ষ, দলে বিশ্বাসঘাতকদের জায়গা নেই। তবে উত্পল দত্ত বেঁচে থাকলে এই অভিনয় দেখে লজ্জা পেতেন। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, এখনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
উল্লেখ্য, গতকালই ফেসবুক পোস্টে  বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন  রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেবে না। এনিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে তরজা।


গতকাল ট্যুইটারে আক্রমণের পর আজ ফের দিল্লি যাওয়ার আগে রাজীবকে নিশানা করলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তিনি বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্যকে মানুষ মেনে নেবে না।


বিধানসভা ভোটের আগে চার্টার্ড ফ্লাইটে দিল্লি নিয়ে গিয়ে, অমিত শাহের বাসভবনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলে নিয়েছিল বিজেপি। ভোটে দলের ভরাডুবি এবং নিজের হারের পর সেই বিজেপির বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিলেন রাজীব। শুভেন্দু অধিকারী গতকাল যখন দিল্লিতে দাবি করছেন, বাংলায় ৩৫৬-র চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি, তখন তাঁরই সতীর্থ রাজীব ফেসবুকে লিখলেন, সমালোচনা তো অনেক হল...মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেবে না। 
এরপর রাজীব আরও লিখেছেন, আমাদের সকলের উচিত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কোভিড ও ইয়াস এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা। 
এবিপি আনন্দকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাংলা ভালভাবে নেয়নি। উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রচারও মানুষ ভালভাবে গ্রহণ করেননি। প্রথম থেকে এর বিরোধিতা করলেও কেউ শোনেনি। 
সম্প্রতি দলের একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে এবং দিলীপ ঘোষের ডাকা বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে, যে সৌমিত্র খাঁ জল্পনা বাড়িয়েছিলেন, গতকাল তিনি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে ট্যুইটারে লিখেছিলেন, ৪২ হাজার ভোটে হারার পর মনে পড়ল? বিজেপির ৪২ জনের বেশি কর্মী মারা গেছে, তখন চুপ থাকা মানে শাসক দলকে সমর্থন করা....এরপর আরেকটি পোস্ট করে বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ তাঁর সতীর্থ রাজীবকে কটাক্ষ করে বলেছেন, মন্ত্রী হতে পারেননি বলে, আবার কি পুরনো দলে ফিরতে ইচ্ছা করছে? 
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সঙ্গে করে নিয়ে বিধানসভা ভবন থেকে বেরিয়েছিলেন রাজীব। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন সহায়ক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে, তাঁর দিকে আঙুল তুলেছিলেন! আবার রাজীবও সে সময় তাঁর সদ্য প্রাক্তন দলকে তুলোধনা করতে ছাড়েননি।
এহেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন বিজেপির প্রতি বেসুরো।এরইসঙ্গে একাধিক তৃণমূলত্যাগী নেতার মতোই তাঁরও প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ঘিরে জল্পনা জোরাল হল বলে মনে করা হচ্ছে। আর এরইমধ্যে ডোমজুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল।