নয়াদিল্লি: প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথে ভারত, যার একঝলক দেখা গেল ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসে। দিল্লির কর্তব্যপথে কুচকাওয়াজের মধ্যেই দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি স্বল্প দূরত্বের কোয়াসি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘প্রলয়’-এর প্রদর্শনী করল ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা DRDO.  শত্রুপক্ষের অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে সক্ষম ভারতের ‘প্রলয়’। এই প্রথম সেটিকে জনসমক্ষে তুলে ধরা হল। (Pralay Ballistic Missile)


বাংলায় ‘প্রলয়’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ধ্বংস বা বিলুপ্তি। নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই প্রবল শক্তিশালী ‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করেছে DRDO. রবিবার প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির কর্তব্যপথে নিজেদের ট্যাবলো নামিয়েছিল তারা। ট্যাবলোর থিম ছিল ‘রক্ষাকবচ’। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্র সত্যি সত্যিই ভারতের রক্ষাকবচ হয়ে উঠতে পারে। উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট গতিপথে ছুটে চললেও, প্রয়োজন মতো গতিপথ পাল্টাতেও পারে 'প্রলয়' ক্ষেপণাস্ত্রটি। শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী অস্ত্রকেও মাত দিতে পারে। (Republic Day 2025)


ভারতীয় সেনা এবং বায়ুসেনার জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্রটি। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। রকেট মোটর দ্বারা চালিত হয় ক্ষেপণাস্ত্রটি। এর দৈর্ঘ্য ৯.০৬ মিটার,  ব্যাস ৭৪০ মিলিমিটার, ওজন ৫.১ টন। ৫০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের পেলোড বহন করতে পারে। এতে যে প্রপালসন সিস্টেম রয়েছে, তাতে ১ টন ওজনের ওয়ারহেড ৩৫০ কিলোমিটার দূরত্বে নিক্ষেপ করতে পারে। ৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের ওয়াহেড নিক্ষেপ করতে পারে ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত। এই ক্ষেপণাস্ত্রে জোড়া লঞ্চার রয়েছে, যা ট্যাবলোতে  ১২x১২ উচ্চতার যানে বসানো ছিল।



নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় মোতায়েন করতেই তৈরি করা হয়েছে ‘প্রলয়’। ‘ব্রহ্মস’, ‘প্রহার’-এর মতো ‘প্রলয়‘ ক্ষেপণাস্ত্রও সীমান্ত নিরাপত্তায় সেনার হাত শক্ত করবে আগামী দিনে। ক্ষেপণাস্ত্র ‘প্রলয়’-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ইতিমধ্যেই সফল হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীতে সেটির অন্তর্ভুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।   


২০২৩ সালে ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিল (DAC) ‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্র কেনায় অনুমোদন দেয়। সেই সঙ্গে দীর্ঘ পাল্লার ‘নির্ভয়’ সাবসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কেনাতেও সায় দেয় DAC. ভারত-চিন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় কয়েকশো ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের কথা রয়েছে।


‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্রটি মূলত ভূমি থেকে ভূমিতে শত্রুপক্ষের হামলা প্রতিহত করতেই তৈরি। কিন্তু একাধিক ওয়ারহেড ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের উপর নির্ভুল আঘাত হানতে পারে। ২০১১ সালে প্রথম ‘প্রলয়’ তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম বার পরীক্ষা করে দেখা হয় সেটি।


উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভারতের দুই প্রতিবেশী দেশ চিন এবং পাকিস্তানের কাছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। চিনের Dong Feng 12 এবং রাশিয়ার Iskander ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে তুলনা চলে 'প্রলয়' ক্ষেপণাস্ত্রের। স্বল্প দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র Precision Strike Missile তৈরিতে এই মুহূর্তে জোর দিচ্ছে আমেরিকাও।