নয়াদিল্লি: নির্বাচন মিটে গেলেও শাসক-বিরোধী সংঘাত জারি। সোমবার ১৮তম লোকসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে, তার আগে প্রোটেম স্পিকার নিয়োগ নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত। নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল থেকে বিজেপি-তে আসা ভর্তৃহারী মাহতাবকে প্রোটেম স্পিকার নিয়োগ করা হয়েছে, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলছেন বিরোধীরা। সংসদীয় রীতির বিরুদ্ধে গিয়ে ভর্তৃহারীকে প্রোটেম স্পিকার নিযুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। ( Pro Tem Speaker Row)


এবারের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তাই সরকার গঠনের জন্য নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল এবং চন্দ্রশেখর নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টির উপর নির্ভর করতে হয়েছে তাদের। সংখ্যার জোরে ১০ বছর পর এবার বিরোধী দলনেতা নিয়োগ করতে চলেছে কংগ্রেস। পাশাপাশি, স্পিকার পদ না পেলেও, প্রোটেম স্পিকার বিরোধী শিবির থেকেই নিয়োগ করা হতে পারে বলে জল্পনা চলছিল। (Lok Sabha News)


কিন্তু সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে বিজেপি। কটক থেকে সাতবারের সাংসদ, লোকসভা নির্বাচনের আগে দলবদল করে বিজেপি-তে আসা ভর্তৃহারীকে প্রোটেম স্পিকার নিযুক্ত করা হয়েছে, যা নিয়ে জোর তরজা শুরু হয়েছে। প্রোটেম স্পিকার পদে এযাবৎ সবচেয়ে অভিজ্ঞ সাংসদকে নিয়োগ করারই রীতি চলে এসেছে। বিজেপি সেই রীতির বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের সাংসদকে পদে বসে বসিয়েছে বলে সরব বিরোধীরা। 


আরও পড়ুন: Delhi Water Crisis : 'দিল্লিতে তীব্র জল সংকট, পাশে নেই হরিয়ানা সরকার..', আজ অতিশীর অনশনের দ্বিতীয় দিন


এ নিয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, "সংসদীয় নিয়ম অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সাংসদে হিসেবে আসীন ব্যক্তিরই প্রোটেম স্পিকার হওয়ার কথা, যিনি নবনির্বাচিত সাংসদদের শপথগ্রহণ করাবেন। সেই নিরিখে ১৮তম লোকসভার সবচেয়ে অভিজ্ঞ সাংসদ হলেন কংগ্রেসের কে সুরেশ এবং বিজেপি-র বীরেন্দ্র কুমার। এঁরা দু'জনই অষ্টম বারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় জন যেহেতু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন, তাই কে সুরেশের প্রোটেম স্পিকার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাত বারের সাংদ ভর্তৃহারীকে প্রোটেম স্পিকার করা হল।"


কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বিজেপি-র বিরুদ্ধে সংসদীয় রীতিনীতিকে ধ্বংস করার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "আরও একবার সংসদীয় নীতি ভেঙে ভর্তৃহারী মাহতাবকে প্রোটেম স্পিকার নিয়োগ করা হল। উনি সাত বারের সাংসদ। কে সুরেশের অষ্টম দফা চলছে।" দলিত হওয়াতেই  সুরেশকে পদ দেওয়া হল না বলেও উঠছে অভিযোগ। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও এ নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর কথায়, "এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কি সঙ্ঘ পরিবারের জাতপাতের রাজনীতি রয়েছে?"


নির্বাচনে পরাজিত হয়েও কংগ্রেস প্রোটেম স্পিকারের পদ নিয়ে দাবি তুলছে কী করে, পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। তাদের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেন, "আপনারা নির্বাচনে হেরেছেন। শান্ত হোন। গাঁইগুঁই না করে, তিন-তিন বার লাগাতার হারলেন কেন, তা পর্যালোচনা করুন।" কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর দাবি, কোনও রকম বিরতি ছাড়া একটানা লোকসভার সাংসদ রয়েছে ভর্তৃহারী। কংগ্রেস মিথ্যা এবং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। লোকসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই কংগ্রেস মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ তাঁর।


লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সংসদের কাজকর্ম চালিয়ে যেতে প্রোটেম স্পিকার নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। প্রো-টেম আসলে লাতিন শব্দ, যার অর্থ সাময়িক।  সাধারণত লোকসভার সবচেয়ে অভিজ্ঞ সাংসদ অর্থাৎ বেশিবারের সাংসদকেই প্রোটেম স্পিকার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। স্পিকার নির্বাচিত হয়ে গেলে, প্রোটেম স্পিকার পদটি লোপ পায়।