ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : NET-এর প্রশ্ন ফাঁস প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর মুখে শোনা গেছে টেলিগ্রাম অ্য়াপ এবং ডার্ক ওয়েবের কথা। অপরাধ সংগঠিত করার জন্য় কেন মাফিয়ার অস্ত্র এই টেলিগ্রাম অ্য়াপ? কেন ডার্ক ওয়েব হয়ে উঠেছে অপরাধ জগতের অংশ? ডার্ক ওয়েব এবং টেলিগ্রাম। NET-এর প্রশ্ন ফাঁস প্রসঙ্গে, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের মুখে এই দু'টি নাম শোনা গেছে।

  


টেলিগ্রাম ব্যবহারের সুবিধে কী 


সাইবার বিশেষজ্ঞ মণিদীপ ভট্টাচার্য জানালেন, টেলিগ্রাম আদতে হোয়াটসঅ্য়াপের মতো মেসেজিং অ্য়াপ। কিন্তু টেলিগ্রামের ক্ষেত্রে সুবিধা হল, এখানে হোয়াটসঅ্য়াপের থেকে বড় ফাইল সহজে পাঠানো যায়। দ্বিতীয়ত, টেলিগ্রামের তথ্য় তদন্তকারীদের পক্ষে খুঁজে বার করা কঠিন। টেলিগ্রামে ব্য়বহারকারী মোবাইল নম্বর গোপন রেখে ইউজার আইডি ব্য়বহার করতে পারে। এমনকী, গ্রুপের অ্য়াডমিনদের কাছেও নিজের নম্বর গোপন রেখে কেউ মেসেজ ও ফাইল পাঠাতে পারে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কারণেই প্রশ্ন ফাঁস করার জন্য় টেলিগ্রাম অ্য়াপকে বেছে নিয়েছিল পরীক্ষা মাফিয়ারা। মনে করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তও। কারণ, টেলিগ্রামের বার্তা আদানপ্রদানের উপর আইনি নজরদারি চালানো মুশকিল। 


২০১৯ সালে, কোচির একটি মামলায়, কেরল পুলিশ হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, হোয়াটসঅ্য়াপ, ফেসবুকের মতো টেলিগ্রাম তদন্তকারী সংস্থাকে তথ্য় দেয় না। তাদের সার্ভারগুলি রয়েছে ভারতের বাইরে। ব্য়বহারকারীদের বিষয়ে কোনও তথ্য় তদন্তকারীদের দেয় না টেলিগ্রাম। ফলে কেউ টেলিগ্রাম অ্য়াপে নম্বর গোপন রাখলে পরিষেবা প্রদানকারীর থেকেও তথ্য় সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। 


 ডার্ক ওয়েব কী? 


কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য় অনুযায়ী, টেলিগ্রামের পর NET-এর প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল ডার্ক ওয়েবে। কী এই ডার্কওয়েব?  মণিদীপ ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের অন্ধকারতম দুনিয়া। ডার্ক ওয়েবের শেষ কথা গোপনীয়তা। এই ব্রাউজার ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট প্রোটোকল বা IP অ্যাড্রেস সেভ করে না। এক বার লগ অফ করে দিলে ব্যবহারকারীর পরিচয় খুঁজে বার করা প্রায় অসম্ভব। এই সুযোগেই পরিচয় গোপন রেখে এখানে বেআইনি কাজকর্ম চলে। অবাধে বিক্রি হয়, আগ্নেয়াস্ত্র থেকে মাদক অবধি।
২০২৩ সালে ভারতের বহু নাগরিকের গোপনীয় তথ্য ডার্ক ওয়েবে ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। রিসিকিউরিটি হান্টার ইউনিট নামে একটি আমেরিকান সংস্থা তখন দাবি করেছিল,  কোটি কোটি ভারতবাসীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডার্ক ওয়েবে নিলাম ডেকে বিক্রি হচ্ছে। 
যার দর ৮০ হাজার ডলার অবধি পৌঁছেছে।  সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তও জানালেন, এই ডার্কওয়েব ব্যবহার করে অনেক অপরাধমূলক কাজ চলে। কোথা থেকে তথ্য আদান প্রদান চলছে কেউই টের পাবেন না।  

নিট থেকে নেটের মতো এলিট পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নেপথ্য়ে কোন গ্য়াং রয়েছে, তার শিকড় অবধি কি তদন্তকারীরা পৌঁছতে পারবেন? টেলিগ্রাম, ডার্ক ওয়েবের আড়ালে লুকিয়ে যে মাফিয়া, লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্য়ৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাদের কি সামনে আনতে পারবে তারা? সেটাই দেখার।