নয়াদিল্লি: ইউরোপ, আমেরিকার পর এবার অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয়দের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ধরা পড়ল সেখানেও। অভিবাসী মুক্ত দেশ চেয়ে সেখানে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে ভারতীয় অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। (Protests Against Immigration in Australia)

আমেরিকাকে অভিবাসীমুক্ত দেখতে চেয়ে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যে সব অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে উদ্যত হন, সেই তালিকায় ভারতীয়রাও ছিলেন। হাতে-পায়ে-কোমরে শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানো হয় দেশে। আয়ারল্যান্ডে ভারতীয়দের নিগ্রহের খবর আসছে লাগাতার। (March for Australia)

সেই তালিকায় এবার নাম জুড়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার। অভিবাসী বিরোধী মিছিলে শামিল হয়েছেন সেখানকার হাজার হাজার নাগরিক। বিশেষ করে ভারতীয়দের তাড়ানোর দাবি তোলা হচ্ছে। ‘মার্চ ফর অস্ট্রেলিয়া’ নামে পুস্তিকাও বিলি করা হয়েছে, যাতে ভারতীয়দের উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, গত ৫ বছরে ভারতীয়র সংখ্যা আরও বেড়েছে। গ্রিক এবং ইতালীয়দেরও ছাপিয়ে গিয়েছেন ভারতীয়রা। দেশের সংস্কৃতিতেও অভিবাসনের প্রভাব পড়ে।  বড় বড় সংস্থা, ব্যাঙ্ক, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অভিবাসী চাইবেই। কারণ অভিবাসী পিছু খাবারের বিক্রি বাড়বে, চাহিদা বাড়বে ঋণের। কিন্তু এসবের মূল্য চোকাতে হচ্ছে দেশকে।

অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ৩১ অগাস্ট দুপুরে যে মিছিল বেরোয়, তাতে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন। ফেসবুকে এ নিয়ে যে পোস্ট লেখা হয়, তাতে দাবি করা হয়, ২০১৩ থকে ২০২৩ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয়দের সংখ্যা বেড়ে ৮ লক্ষ ৪৫ হাজার হয়েছ গিয়েছে। ‘March for Australia’ নামক ওয়েবসাইটে লেখা হয়, ‘দলে দলে অভিবাসী এসে ভিড় করায় আমাদের নিজেদের মধ্যেকার বন্ধন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে’। X পোস্টে লেখা হয়, ‘মূলস্রোতের রাজনীতিকদের অভিবাসন বন্ধের পক্ষে সওয়াল করার সাহস নেই। অস্ট্রেলীয়দেরই একজোট হতে হবে’।

অভিবাসনের বিরুদ্ধে সিডনি, মেলবোর্ন, ক্যানবেরা-সহ একাধিক শহরে মিছিলে বেরোয়। সিডনিতে মিছিলে অংশ নেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। গায়ে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে রাস্তায় নামেন অনেকে। মেলবোর্নে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে আন্দোলনকারী। লাঠিচার্জ হয়, ছোড়া হয় পেপার স্প্রে। গ্রেফতার হয়েছেন ছ’জন। ক্যানবেরায় যে মিছিল বেরোয়, তাতে শামিল হন দেশের সাংসদ বব ক্য়াটার। One Nation-এর পউলিন হ্যানসন, সেনেটর ম্যালকম রবার্টসও অংশ নেনে মিছিলে।

অভিবাসী তথা ভারতীয়দের প্রতি এই বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের  বিরোধিতাও করছেন অনেকে। কট্টর দক্ষিণপন্থা অস্ট্রেলিয়ায় মাথা তুলছে বলে দাবি Refugee Action Coalition সংগঠনের। পাল্টা মিছিলের আয়োজন করা হয় তাদের তরফেও। দেশের শ্রমমন্ত্রী মুরে ওয়াট বলেন, “অস্ট্রেলিয়ায় আজ যে মিছিল হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা করছি আমরা। ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো, বিভাজন তৈরির এই মিছিলকে সমর্থন করি না আমরা।” যে বা যাঁরা এই ধরনের মিছিলের আয়োজন করছেন, তাঁদের ‘নব্য নাৎজি’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।