অমৃতসর: পাঞ্জাবে পালাবদল। ২০১৭ সালের হিসেব উল্টে ভরাডুবি হল কংগ্রেসের। চমক দিয়ে সীমান্তবর্তী রাজ্যটিতে একচেটিয়া ভাবে জয় ছিনিয়ে আনল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (aap)। এই প্রথম দিল্লির বাইরে গিয়ে কোনও রাজ্যে ক্ষমতা দখল আপের। শুধু হারই নয়, কংগ্রেস (congress) ও শিরোমণি আকালি দলের (sad) একাধিক নেতা ভোটের ময়দানে কার্যত পর্যুদস্ত হলেন। ভোটের পর পাঁচ রাজ্যের ভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পর কংগ্রেস কর্মীদের সান্ত্বনা নিয়ে টুইট করেছেন রাহুল গাঁধী। এদিকে দলের জয়ের খবর আসতে শুরু করার পরেই দিল্লিতে হনুমান মন্দিরে পুজো দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। 


বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১১৭ আসনের পাঞ্জাব বিধানসভায়  ৯২টি আসনে জয় পেয়েছে আম আদমি পার্টি। গতবারের জয়ী কংগ্রেসের দখলে এসেছে সাকুল্যে ১৮টি আসন। পাঞ্জাবের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি শিরোমণি আকালি দলের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। মাত্র ৩টি আসনে জয় পেয়েছে এককালের শাসক দল। বিজেপির দখলে গিয়েছে ২টি আসন। বহুজন সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ১টি আসন। একটি আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী।


কংগ্রেসের এই হারের ধাক্কা লেগেছে দলের একাধিক নেতার গায়েও। অমৃতসর পূর্ব আসনে আপের প্রার্থী জীবনজ্যোত কউরের কাছে হেরেছেন পাঞ্জাবের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোৎ সিংহ সিধু। শুধু তাই নয়, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নিও হেরেছেন। দুটি কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দুটি কেন্দ্রেই কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়েছেন ভোটাররা। কংগ্রেসই শুধু নয়, ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে শিরোমণি আকালি দলও। হারের ধাক্কা গিয়ে পৌঁছেছে বাদল পরিবারেও। আপের প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছেন পাঞ্জাব রাজনীতির পিতামহ ভীষ্ম বলে পরিচিত শিরোমণি আকালি দলের প্রধান প্রকাশ সিং বাদল। হেরে গিয়েছেন প্রকাশ সিং বাদলের ছেলে সুখবীর সিং বাদলও। পাঞ্জাবে ভোট বৈতরণী পেরোতে কংগ্রেসত্যাগী অমরিন্দর সিংহের নতুন দলের সঙ্গে জোট করেছিল বিজেপি। কিন্তু তাতেও কোনও ফল মেলেনি।


জয়ের পর  আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, 'পাঞ্জাবের ফল বড় ইনকেলাব। বড় বড় চেয়ার হেলে গেছে। সুখবির সিং বাদল, ক্যাপ্টেন, চান্নি, প্রকাশ সিং বাদল, সিধু হেরে গেছেন। পাঞ্জাবের লোক কামাল করে দিয়েছে।' বড় বড় নেতাদের হারিয়েছে আপের খুব সাধারণ কর্মীরা, বলেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, 'চন্নিকে কে হারিয়েছেন জানেন? যিনি মোবাইল ফোনের দোকানে কাজ করেন। সিধুকে হারিয়েছে আমাদের এক সাধারণ কর্মকর্তা।' আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন ভগবন্ত মান। ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। পাঞ্জাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাঘব চাড্ডা বলেন, 'উড়তা পাঞ্জাব নয়, এবার থেকে পাঞ্জাবের পরিচয় হবে উঠতা পঞ্জাব হিসেবে। সব কৃতিত্ব আপে কর্মী সমর্থকদের।'


পাঞ্জাবে আপের ক্ষমতাদখল, ভারতের রাজনীতিতে টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। দিল্লিতে উন্নয়নের বার্তা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল আম আদমি পার্টি। একই উন্নয়নের মডেলকে সামনে রেখে পাঞ্জাব বিধানসভাতেও নির্বাচনে লড়েছে আপ। সেখানে ভরসা করেই উজাড় করে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। এবার কী অন্য খাতে বইবে পাঞ্জাবের রাজনীতি? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। 


আরও পড়ুন: বুলডোজারে বিরোধীদের গুঁড়িয়ে উত্তরপ্রদেশের কুর্সিতে ফের যোগী আদিত্যনাথ