পুরী : ফি বছর পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রার সময় পালিত হয় আনাসারা । ১৫ দিনের এই নিভৃতবাস বা আনাসারা উপলক্ষে পবিত্র ফুলুরি তেল ব্যবহার করা হয় মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার চিকিৎসায়। যে প্রথা দ্বাদশ শতক থেকে চলে আসছে।


ফুলুরি তেল : এটি এক ধরনের ভেষজ ঔষধি তেল। যার রেসিপি অত্যন্ত গোপন। পবিত্র উৎসব উপলক্ষে এই তেল ব্যবহার করা হয়। এক হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসে সমৃদ্ধ এই উপাচার।


কী সেই উপাচার ?


জৈষ্ঠ্যমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্নানযাত্রা পালিত হয়। স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের উত্তর দিকের কূপ থেকে জল এনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে তার শুদ্ধিকরণ করা হয়। তারপর ১০৮টি ঘড়ায় সেই জল নিয়ে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার বিগ্রহকে স্নান করানো হয়। পৌরানিক কাহিনী অনুযায়ী, স্নানের পর জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন তাঁরা। শ্রীজগদীশের আজ্ঞানুসারে এই ১৫ দিন শ্রীমন্দিরের দ্বার রুদ্ধ থাকে। এই সময়ে তাঁদের রাজবৈদ্যের চিকিৎসাধীনে গোপনে একটি সংরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়। যাকে আনসারা কক্ষ বলে।


কথিত আছে, রাজবৈদ্যের আয়ুর্বৈদিক পাঁচন খেয়ে এক পক্ষকাল অর্থাৎ দিন ১৫-র মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা। তবে, শুধু পাঁচন নয়, একাদশীর স্নান পূর্ণিমায় দেবস্নানের পর ধুম জ্বর আসা- জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে ফুলুরি তেল মাখিয়েও সেবা করা হয়। ভেষজ ঔষধি গুণসম্পন্ন এই তেল।


মন্দিরের আনসারা ঘরেই তিন দেব-দেবীকে এই তেল মাখানো হয়। রাহুলেখা ও চিতালাগি আচারের পর, সেবাকর্তা বা সেবায়তরা দেব-দেবীদের রোগ থেকে সারিয়ে তুলতে চিকিৎসা শুরু করেন। ফুলুরি তেলে মাসাজের জেরে সেরে ওঠেন দেব-দেবীরা। তার পরেই ভক্তদের দেখা দেন। রথয়াত্রার আগের দিন আনসারা বেদিতে নবযৌবন বেশে দেখা দেন তাঁরা।


কিন্তু, কারা এই তেল প্রয়োগ করতে পারেন ? নির্দিষ্ট কিছু মানুষই দেবদেবীদের তেল প্রয়োগ করতে পারেন। তাঁরা সেবায়ত- বিশ্ববসু ও বিদ্যাপতির উত্তরসূরি। তেল মাখিয়ে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে সারিয়ে তোলার পর, তাঁরা ভারী খাবার খেতে সক্ষম হয়ে ওঠেন। যদিও তাঁদের শুধুমাত্র তরল খাবারই দেওয়া হয়।


প্রসঙ্গত, এবার পুণ্য রথযাত্রার সময় শুরু হচ্ছে ২০ জুন রাত  ১০টা ৪ মিনিটে, শেষ হচ্ছে পরের দিন সন্ধে ৭টা ৯ মিনিট নাগাদ। আর উল্টো রথ পড়েছে ২৮ জুন। অর্থাৎ নিয়মমতই বাংলা মাসের ১০ আষাঢ়।