নয়াদিল্লি: বিরোধী দলনেতা হিসেবে লোকসভার প্রথম ভাষণেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। এবার তাঁর ভাষণের কিছু অংশ লোকসভার রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হল। সোমবার লোকসভার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি, আদানি-আম্বানি, NEET, অগ্নিপথ প্রকল্প এবং হিন্দুধর্ম নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল, তার বেশ খানিকটা অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।  সেই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। রাহুল নিজে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়ে বাদ দেওয়া অংশ ফেরানোর আবেদন জানিয়েছেন। রাহুলের বক্তব্য, "মোদিজির দুনিয়ায় সত্যকে বাদ দেওয়াই রীতি। কিন্তু বাস্তবে সত্যকে বাদ দেওয়া যায় না। যা বলার ছিল বলেছি আমি, সত্যই বলেছি। যত ইচ্ছে বাদ দিন ওঁরা, সত্য সত্য হয়েই থাকবে।" (Rahul Gandhi Speech Expunged)


১৮তম লোকসভায় সোমবার বিরোধী দলনেতা হিসেবে প্রথম ভাষণ দেন রাহুল। সেখানে দেশের সংবিধানের প্রতিলিপি তুলে ধরার পাশাপাশি, ভগবান শিবের ছবিও তুলে ধরেন তিনি। রাহুল জানান, নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করে বিজেপি যে ঘৃণা, হিংসা এবং ভীতি প্রদর্শনের রাজনীতি করছে, হিন্দুদের আরাধ্য শিব কখনও সেই বার্তা দেননি, বরং অহিংসা, ভয় কাটিয়ে ওঠার প্রতীক শিব। অধিবেশন চলাকালীনই রাহুলের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করতে উঠে দাঁড়ান মোদি। রাহুল গোটা হিন্দু সমাজকে হিংস্র বলছেন,অপমান করছেন বলে অভিযোগ করেন। এর পাল্টা রাহুল জানান, হিন্দুদের নয়, মোদি, বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘকে আক্রমণ করেছেন তিনি। মোদি, বিজেপি বা সঙ্ঘ গোটা হিন্দু সমাজ নন। (Lok Sabha)


এর পরও রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর দাবি ছিল, বিজেপি-কে হিংস্র বলার জন্য রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে। রাহুল যদিও সুর নরম করেননি। NEET, অগ্নিপথ প্রকল্প এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ নিয়ে লাগাতার কেন্দ্রকে আক্রমণ করে যান তিনি। আদানি-আম্বানিদের নিয়েও কেন্দ্রকে বেঁধেন। রাহুলের ভাষণের এই অংশও বাদ দেওয়া হয়েছে লোকসভার রেকর্ড থেকে। 



সেই নিয়ে এদিন স্পিকারকে চিঠিও দিয়েছেন রাহুল। তাঁর কথায়, 'লোকসভার প্রত্যেক সদস্য মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন। সংবিধানের ১০৫ (১) ধারা অনুযায়ী বাক স্বাধীনতা রয়েছে তাঁর।  সংসদে দেশের মানুষের উদ্বেগ তুলে ধরাই কাজ সাংসদদের। দেশের মানুষের কাছে সেই দায়বদ্ধতাই পালন করেছি আমি। তাই আমার ভাষণের অংশ বাদ দেওয়া সংসদীয় নীতির পরিপন্থী'। বেছে বেছে তাঁর ভাষণের অংশই কেন বাদ দেওয়া হল, এর নেপথ্যে কী যুক্তি, প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল।


এ প্রসঙ্গে বিজেপি-র সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরের ভাষণেরও উল্লেখ করেন রাহুল। সংসদে দাঁড়িয়ে অনুরাগও বিস্ফোরক সব অভিযোগ তুলেছিলেন, ধর্মীয় মন্তব্য করেছিলেন, তাঁর সেই ভাষণের অংশ কেন রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হল না প্রশ্ন তোলেন রাহুল। সোমবারও অনুরাগের কথা লোকসভায় উল্লেখ করেছিলেন রাহুল। সনাতন ধর্ম নিয়ে অনুরাগ যে মন্তব্য করেছেন, তার প্রেক্ষিতেই তিনি হিন্দুধর্মের নীতি তুলে ধরতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। 


এভাবে রাহুলের ভাষণের অংশ বাদ দেওয়া নিয়ে I.N.D.I.A জোটের তরফেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদ মনোজ ঝা বলেন, "লোকসভার রেকর্ড থেকে তুলে নিলেও, মানুষের স্মৃতি থেকে মোছা যাবে না।" শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, "হিন্দু ধর্মের নামে বিদ্বেষ, ঘৃণার রাজনীতি করেন যাঁরা, তাঁদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন রাহুল। ওঁদের এবং আমাদের মধ্যে ফারাক রয়েছে। ওঁরা রাজনীতির জন্য হিন্দু ধর্মের ব্যবহার করেন, আমরা আমাদের বিশ্বাস নিয়ে চলি। ওঁরা ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ান, আমরা ভালবাসা, স্নেহের রাজনীতি করি। বিজেপি হিন্দুধর্মের ঠিকাদার নয়, মোদি একা গোটা হিন্দু সমাজ নন, একথা ভাষায় ব্যক্ত করেছেন রাহুল। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে রাহুলের ভাষণের অংশ রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হল।"