মস্কো: লাদাখে সংঘাতে ইতি টানতে চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেংঘির সঙ্গে বৈঠকে রাজনাথ সিংহ। বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলে (স্থানীয় সময়) এই বৈঠক হওয়ার কথা।


সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলেন যোগ দিতে গতকাল মস্কো পৌঁছন রাজনাথ। সম্মেলনের পাশাপাশি রুশ প্রতিরক্ষমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন তিনি।


কিন্তু, গতকাল পর্যন্ত খবর ছিল, চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কোনও বৈঠকের সম্ভাবনা নেই রাজনাথের। কিন্তু, বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তরফে বৈঠকের বিশেষ আবেদন আসে রাজনাথের কাছে।


বৈঠকের আবেদন গ্রহণ করে ভারত। নয়াদিল্লির তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ভারত সর্বদা প্রস্তুত। এরপরই বৈঠক স্থির করা হয়।


প্রসঙ্গত, গত মে মাসে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা সেনার আগ্রাসনের ঘটনার পর এটাই হতে চলেছে দুদেশের শীর্ষ রাজনৈতিক স্তরের প্রথম বৈঠক।


বৈঠক আরও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, মোদি সরকারের ২ নম্বর আসনে রয়েছেন রাজনাথ। তিনি বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। অন্যদিকে, জেনারেল ওয়েই হলেন চিনা সেনার প্রাক্তন মিসাইল ফোর্সের কমান্ডার। বর্তমানে স্টেট কাউন্সিলর ও শক্তিশালী সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সদস্য, যার মাথায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।


বৈঠক যে সীমান্ত সংক্রান্ত হবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বর্তমানে, ভারত-চিন সীমান্ত পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ বলে এদিনই উল্লেখ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে।


গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার বর্বরোচিত হামলায় ২০ ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে সীমান্ত পরিস্থিতি। ওই সংঘর্ষে প্রায় ৩৫ জনের মতো চিনা সেনাকর্মীও হতাহত হয়েছে বলে খবর। যদিও, সংখ্যা প্রকাশ করেনি বেজিং।


ওই ঘটনার পর থেকে লাদাখ সীমান্তে উভয় পক্ষই বিশাল বাহিনী ও অস্ত্র মজুত করেছে। প্রভূত পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। এর মধ্য়েই, চলতি সপ্তাহে দু-দুবার ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করে চিনা ফৌজ। কিন্তু, ভারত সেই প্রচেষ্টা রুখে দেয়।


ইতিমধ্যেই, সীমান্ত সংঘাত নিয়ে চিনা প্রতিনিধির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ভারতের যুগ্ম বিদেশসচিব(পূর্ব এশিয়া) নবীন শ্রীবাস্তব। সেখানে ভারত-চিন সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।


জানা গিয়েছে, রাজনাথ-ওয়েই বৈঠকের পর আগামী ১০ তারিখ বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মস্কোয় এই সম্মেলনের ফাঁকেই মিলিত হবেন এস জয়শঙ্কর ও ওয়াং ওয়াই।


রাজনাথ ও ওয়েই-এর এই বৈঠক এমন একটি সময়ে হচ্ছে, যেসময় লাদাখ ও চিন-অধিকৃত আকসাই চিন নিয়ে সংঘাতে দুই দেশ। একদিকে, ১৯৬০ সালে সবুজ রেখা দিয়ে মানচিত্রে টানা দাগকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বলছে ভারত। অন্যদিকে, কালো রেখা দিয়ে অন্য অন্য দাগকে প্রকৃতরেখা দাবি করছে চিন।


গত মে ও জুন মাসে প্যাংগং লেকে নিজেদের সুবিধাজনক জায়গায় এনে ফেলেছিল চিনা সেনা। কিন্তু, সম্প্রতি হৃদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পুনর্দখল করেছে ভারত। বিশেষ করে দক্ষিণ প্রান্তে কিছু জায়গা থেকে চিনাদের হঠিয়ে দেয় ভারতীয় সেনা কমান্ডোরা।


পাশাপাশি, গুরুত্বপূর্ণ শিখরও দখল করেছে ভারত। যে কারণে, অতি স্পর্শকাতর ফিঙ্গার ফোর এলাকায় এখন পুরো নজরদারি চালাতে পারবে ভারত।