শ্রীনগর: জম্মু ও কাশ্মীরের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নিয়ে অশান্তি থামার নাম নেই। ৪২ জন মুসলিম পড়ুয়ার ভর্তির বিরুদ্ধে এবার পথে নামল রাষ্ট্রীয় বজরং দল। হিন্দুদের জন্য সংরক্ষণের দাবিও তুলল তারা। বৃহস্পতিবার পথে নামে রাষ্ট্রীয় বজরং দল, যাকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে উপত্যকায়। 

Continues below advertisement

শ্রী মাতা বৈষ্ণোদেবী ইনস্টিটিউ অফ মেডিক্যাল এক্সিলেন্স-এ ভর্তি নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে তপ্ত উপত্যকার রাজনীতি। NEET পরীক্ষার ফলাফলের নিরিখে সম্প্রতি MBBS-এ ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশিত হয় সেখানে, যাতে দেখা যায় ২০২৫-’২৬ শিক্ষাবর্ষে ৫০টি আসনের মধ্যে, ৪২ জনই মুসলিম পড়ুয়া। বাকি সাত জন হিন্দু এবং এক শিখ পড়ুয়ার নাম রয়েছে তালিকায়। 

মেডিক্যাল কলেজের ওই মেধাতালিকা ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ৮৫ শতাংশ পড়ুয়াই মুসলিম কেন, প্রশ্ন তোলে হিন্দুত্বাবাদী সংগঠনগুলি। এমনকি বেশি সংখ্যক মুসলিম পড়ুয়া ভর্তির নেপথ্যে বড় কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলেও অভিযোগ তোলে তারা। শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে লক্ষ লক্ষ হিন্দু যে টাকা দান করেন, সেখান থেকে অনুদান যায় ওই মেডিক্যাল কলেজে। হিন্দুদের অনুদানের টাকায় বেশি সংখ্যক মুসলিম পড়ুয়াকে কেন সুযোগ দেওয়া হবে, প্রশ্ন তোলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি।

Continues below advertisement

সেই নিয়েই রাষ্ট্রীয় বজরং দলের প্রধান রাকেশকুমারের নেতৃত্বে এদিন উপত্যকায় বিরাট মিছিল বেরোয়। ইন্দিরা চকের দিকে এগিয়ে যায় মিছিল। হিন্দুদের জন্য ‘বিচার’ চেয়ে স্লোগান তোলা হয়। স্লোগান তোলা হয় মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার বিরুদ্ধেও। ওমর আবদুল্লা এবং শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী সৌধ বোর্ডের কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। রাকেশের বক্তব্য, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি সম্প্রদায়ের আধিপত্য থাকবে কেন? গোটা ঘটনার তদন্ত হওয়া চাই।” লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।

এক্ষেত্রে কী করণীয়, সরকারকে তার পরামর্শও দেন রাকেশ। তাঁর মতে, মুসলিম পড়ুয়াদের উপত্যকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে, অন্য কলেজ থেকে সেখানে হিন্দু পড়ুয়াদের নিয়ে আসা উচিত। ওমরের আচরণ মুখ্যমুন্ত্রীসুলভ নয়, বরং মুসলিমদের ধর্মীয় নেতাসুলভ বলেও দাবি করেন রাকেশ। তাঁর কথায়, “বৈষ্ণোদেবী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দান করা জমিতে ৫০টি আসনে কী করে ৪২ জন মুসলিমকে ভর্তি করা হয়? নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাত্র সাতটি আসন পাবে হিন্দুরা?”

শুধু রাষ্ট্রীয় বজরং দলই নয়, জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখাও করেন। বৈষ্ণোদেবী ইউনিভার্সিটিকে ‘গুরুকুলে’ রূপান্তরিত করার আবেদন জানান। আধুনিক শিক্ষার পরিবর্তে উপত্যকায় বেদ নিয়ে গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা পাড়েন তিনি। মাতা বৈষ্ণোদেবীর নামে দান করা টাকা সঠিক খাতে ব্যবহারের কথাও বলেন।

যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ধর্মের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে, এর আগে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর। তিনি বলেন, “কেউ বাধা দিচ্ছে না। ধর্মের নিরিখে আসন বণ্টন করতে চাইলে করুন। সেক্ষেত্রে সরকারও অন্যখাতে অনুদান দেবে। আমাদের আপত্তি নেই। একই ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাজ্য সরকারকে জমির দাম মিটিয়ে দিন, সরকারি অনুদান গ্রহণ বন্ধ করুন। স্টেটাস বদলে দিয়ে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। তার পর ধর্মের নিরিখে আসন বণ্টন করুন। মেধার ভিত্তিতে NEET হয়েছে। তাতে কেউ যদি ভাল ফল না করতে পারে, তার জন্য অন্যদের দোষী সাব্যস্ত করা যায় কি?”