নয়াদিল্লি: করফাঁকি থেকে কারচুপি, এমনকি জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে। তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই পরিস্থিতি উত্তাল। সেই আবহে আরও বিপাকে পড়তে পারে আদানি গোষ্ঠী (Adani Group)। কারণ তাদের গতিবিধি এ বার খতিয়ে দেখতে নামল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India)। আদানি গোষ্ঠীকে কে, কত টাকা ঋণ দিয়েছে, তা নিয়ে ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে বিশদ তথ্য চেয়ে পাঠাল রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক।


আরও বিপাকে পড়তে পারে আদানি গোষ্ঠী!


সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্যাঙ্কের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আদানি গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে যাদের। কবে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার কিস্তি নিয়মিত জমা পড়েছে কিনা, কত টাকার ঋণ আনাদায়ী অবস্থায় পড়ে রয়েছে, এই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।


লেনদেন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা CLSA-র দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, গত তিন-চার বছরে আদানি গোষ্ঠীর পাঁচটি সংস্থার ঋণের পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি থেকে বেড়ে ২ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো ছিল ২০২২ সালে। তবে ভারতের ব্যাঙ্কগুলি থেকে গত তিন বছরে আদানি গোষ্ঠীকে ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছিল বলে এখনও পর্যন্ত তথ্য় উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে CLSA.


আরও পড়ুন: Adani FPO: কারচুপির অভিযোগে উত্তাল বাজার, বাজেটের দিনই FPO তুলে নিল আদানি গোষ্ঠী


লগ্নি সংক্রান্ত বিষয়ে আমেরিকার গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের (Hindenburg Research) একটি রিপোর্টে সম্প্রতি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। করফাঁকির স্বর্গরাজ্যে একাধিক ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে লেনদেন, বিপুল পরিমাণ ঋণ সংক্রান্ত তথ্য লুকনোর অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী লাগাতার শেয়ার দরে কারচুপি করেছে, আর্থিক প্রতারণায় যুক্ত থেকেছে। তার পর থেকেই শেয়ার বাজারে লাগাতার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন আদানি। সেরা ১০ ধনকুবেরের তালিকার বাইরে চলে গিয়েছেন তিনি। 


২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গের ওই রিপোর্ট যে দিন প্রকাশিত হয়, ওই দিনই আদানি গোষ্ঠীর FPO বাজারে আসে। শেয়ার বাজারে লগ্নির ক্ষেত্রে ইনিশিয়াল পাবলিক অফার বা IPO এমনিতে খুবই জনপ্রিয়। এ ক্ষেত্রে, প্রথম বার বাজারে শেয়ার ছেড়ে স্টক এক্সচেঞ্জে নাম নথিভুক্ত করে কোনও সংস্থা। তার পর শুরু হয় লেনদেন। পরবর্তী কালে ওই সংস্থা চাইলে আবারও যে কোনও সময় বাজারে শেয়ার ছাড়তে পারে, তাকে বলা হয় FPO। অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য অতিরিক্ত কিছু শেয়ার ছেড়ে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। একাধিক বার FPO আনতে পারে যে কোনও সংস্থা। তার প্রভাব পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দরেও। আদানি গোষ্ঠী যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি ভারতের উপর অযাচিত আঘাত হানা হচ্ছে। এর পাল্টা হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে জালিয়াতি আড়াল করছে আদানি গোষ্ঠী।


বাজেট পেশের দিন বাজার থেকে FPO তুলে নেয় আদানি গোষ্ঠী


সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই, বুধবার সংসদে বাজেট পেশের দিন বাজার থেকে FPO তুলে নেয় আদানি গোষ্ঠী। তার পরই তাদের দেওয়া ঋণ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তথ্য-তলাশে নেমেছে বলে জানা গেল। এ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে যদিও কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। অন্য দিকে, গৌতম আদানির দাবি, তাঁর সংস্থায় সব ঠিক আছে। বিনিয়োগকারীদের যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্য নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই FPO তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।