নয়াদিল্লি: বিজেপিকে হঠাতে বিরোধীদের জোটের কথা বলে এসেছে কংগ্রেস। কিন্তু বিরোধী জোটের পালে তেমন হাওয়া দেখা যায়নি। কখনও কংগ্রেসকে দূরে সরিয়ে রেখে বিরোধী মঞ্চ তৈরির চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। অখিলেশ যাদব, নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে দেখা করেছেন মমতা। অন্যদিকে সংসদের চলতি অধিবেশনে কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে যোগ দেয়নি তৃণমূল। আলাদা করে বিজেপি বিরোধী কর্মসূচি নিয়েছে। রাহুল গাঁধী যখন ভারত জোড়ো যাত্রা করছে তখনও সেখানে দেখা যায়নি তৃণমূলকে। কিন্তু সেই ছবি যেন হঠাৎ পাল্ট গেল। রাহুল গাঁধীর সাংসদ পদ খারিজের বিষয়টি এক মুহূর্তে সব বিরোধীদের যেন এককাট্টা করে দিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে উদ্বব ঠাকরে, অখিলেশ যাদব। ভারতের প্রায় সব বিরোধী দলের নেতারা এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন।


তোপ মমতা-অভিষেকের:
কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরা-মেঘালয়ে নির্বাচনের সময় থেকে সাগরদিঘির উপনির্বাচন- সবক্ষেত্রেই কংগ্রেসকে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। নানাভাবে কংগ্রেসের সমালোচনাও করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে। জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব থেকে ঘর গোছানো শুরু করেছিল তৃণমূল। এমনকী রাহুলকে মুখ করলে বিজেপিরই আদতে সুবিধা হবে- এমন বক্তব্যও রাখা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। সেই পরিস্থিতিতেই এদিন রাহুল গাঁধীর সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মমতা। তিনি ট্যুইট করে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নতুন ভারতে বিরোধী নেতারা বিজেপির প্রাইম টার্গেট। অপরাধের ইতিহাস থাকলেও, মন্ত্রিসভায় আছেন বিজেপি নেতারা। অপরাধের ইতিহাস থেকেই বিজেপি নেতারা মন্ত্রিসভায়। মন্তব্যের জন্য বিরোধী নেতাদের সাংসদ পদ খারিজ। সাংবিধানিক গণতন্ত্রে আরও অবমননের সাক্ষী হলাম', ট্যুইট তৃণমূলনেত্রীর। একই ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি ট্যুইট করে বলেন, 'গণতান্ত্রিক ভারত এখন অলীক।'


সরব অখিলেশ:
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, 'প্রথমে তো মিথ্যে মামলা করে। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির একাধিক বিধায়কের সদস্যপদও বিজেপি খারিজ করেছে। এখন কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় নেতার সদস্যপদও নিয়ে নেওয়া হল। আসল যা বিষয়- মূল্যবৃদ্ধি-বেকারত্ব, সেদিক থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে। এখন কংগ্রেসের নেতার সদস্যপদ নিল, আগে সমাজবাদী পার্টির নেতার সদস্যপদ নিয়েছিল।'


উদ্ধবের তোপ:
উদ্ধব ঠাকরেও রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের সমালোচনা করে বলেছেন, 'এটা গণতন্ত্রের হত্য়া। এদেশে চোরকে চোর বলাও অপরাধ।'


কড়া সমালোচনায় বাম:
কড়া সমালোচনা করেছেন বিমান বসুও। তিনি বলেন, 'অপরাধীদের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া নেওয়া হয়। এখানেও সেটা নেওয়া হয়েছে। এটা ভয়ঙ্কর। এ ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজ্য তথা দেশের মানুষের গর্জে ওঠা উচিত। এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়।'


আক্রমণ শানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও। ট্যুইটে বিজেপিকে নিশানা করে আক্রমণ করেছেন তিনি। রাহুলের সদস্যপদ খারিজের প্রশ্নে প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও সরব হয়েছেন। ট্যুইটে তিনি লেখেন, 'নীরব মোদির ১৪ হাজার কোটির কেলেঙ্কারি। ললিত মোদির ৪২৫ কোটির কেলেঙ্কারি। মেহুল চোক্সির ১৩ হাজার ৫০০ কোটির কেলেঙ্কারি। যাঁরা দেশের টাকা লুঠ করেছে, বিজেপি তাঁদের কেন বাঁচাচ্ছে? কেন তদন্ত থেকে দূরে পালাচ্ছে? যাঁরা প্রশ্ন তুলছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। বিজেপি কি দুর্নীতিগ্রস্তদেরই সমর্থন করে?'


রাহুল গাঁধীর সাংসদ পদ খারিজের প্রশ্নে এক ছাতার তলায় দেশের বিরোধী রাজনৈতিক পরিসর। সামনের বছরেই লোকসভা ভোট। তার আগে এক ছাতার তলায় সব বিরোধীরা এলে কি চাপ বাড়বে বিজেপির? নাকি তা আদতে সুবিধা করবে বিজেপির? উত্তর দেবে সময়। 


আরও পড়ুন: 'রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি মোদি সরকারের', মন্তব্য অধীরের