মুম্বই : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত জেরবার দেশ। বড়সড় পরীক্ষার মুখে চিকিৎসা ব্যবস্থা। এবারও উত্তরোত্তর হারে সংক্রমণ বাড়ছে মহারাষ্ট্রে। মুম্বইয়ের পরিস্থিতি নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ উদ্ধব সরকারের। এরকম একটা কঠিন সময়ে মুম্বইয়ে করোনা মোকাবিলায় ফের একবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন। বর্ধিত প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে বাড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন পরিষেবা।
মহারাষ্ট্র সরকার ও বৃহন্মুম্বাই পুরনিগমের সঙ্গে একযোগে করোনা মোকাবিলায় নেমেছে রিলায়েন্স। এই মর্মে আরও চারটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সংস্থার তরফে। এক প্রেস বিবৃতিতে তা জানানো হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক মুম্বইয়ে করোনা-সঙ্কটের মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে রিলায়েন্স।
১. NSCI-এ ৬৫০ বেডের ব্যবস্থা স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতালের :
- রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন নতুন করে ১০০টি ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট বেড তৈরি করবে। এবং এগুলির ব্যবস্থাপনা দেখবে। আগামী ১৫ মে, ২০২১ থেকে এর কাজ শুরু হবে।
- ১ মে থেকে প্রায় ৫৫০ বেড বিশিষ্ট ওয়ার্ডের ম্যানেজমেন্ট এবং কার্যকলাপের দায়িত্বভার তুলে নেবে স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতাল।
- ৬৫০ করোনা রোগীর(৬৫০ বেড) জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতাল।
- রোগীদের শারীরিক অবস্থার উপর সবসময় নজরদারি চালানোর জন্য ৫০০-র বেশি চিকিৎসক, নার্স এবং নন-মেডিক্যাল কর্মীর টিম মোতায়েন করা হবে।
- ICU বেড, মনিটর, ভেন্টিলেটর, চিকিৎসা সামগ্রী, ৬৫০ বেডের পরিচালনা সহ এই প্রকল্পের যাবতীয় খরচ বহন করবে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন।
- NSCI এবং সেভেন হিলস হাসপাতালে সমস্ত করোনা রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হবে
২. গত বছর মুম্বইয়ের সেভেন হিলস হাসপাতালে ২২৫টি শয্যা বিশিষ্ট ভারতের প্রথম করোনা হাসপাতাল তৈরি করেছিল রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন এবং বৃহন্মুম্বই পুরনিগম। এই ২২৫টি বেডের মধ্যে ২০টি ICU বেড সহ মোট ১০০টি বেডের যাবতীয় দায়িত্বভার নেয় স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। এই সেভেন হিল হাসপাতালে অতিরিক্ত আরও ২৫টি ICU বেড বাড়ানো হবে। এর জেরে ৪৫টি ICU বেড সহ মোট ১২৫টি বেডের দায়িত্বে RF।
৩. বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সের দ্য ট্রাইডেন্ট হোটেলে মৃদু এবং উপসর্গহীন রোগীদের জন্য আরও ১০০ বেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। BMC-র গাইড লাইন মেনেই তা করা হচ্ছে। এর ব্যবস্থাপনায় থাকবে স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতাল।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, পর্যটন ও পরিবেশমন্ত্রী, MCGM-এর সিনিয়র আধিকারিকবৃন্দ, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন এবং স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে বললে, সেভেন হিলস হাসপাতাল, NSCI, ট্রাইডেন্ট বিকেসি মিলিয়ে ১৪৫টি ICU বেড সহ মোট ৭৭৫ বেডের দায়িত্বভার গ্রহণ RHF-এর।
মুম্বইয়ে করোনা মোকাবিলায় মানব-হিতৈষী কোনও সংস্থার সবথেকে বড় অবদান :
এপ্রসঙ্গে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন নীতা আম্বানি বলেন, "দেশের প্রতি সেবায় সবসময় সামনে থাকে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন। মহামারীর বিরুদ্ধে ভারতের অবিরাম লড়াইয়ে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা বিরামহীন হয়ে কাজ করে চলেছেন। যাঁদের প্রয়োজন রয়েছে তাঁদের সবথেকে ভালো চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে অনেক মূল্যবান জীবন রক্ষা করবেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। মুম্বইয়ে ৭৭৫ বেডের দায়িত্ব নেবে স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতাল।"
তাঁর আরও সংযোজন, "আমরা রোজ বিনামূল্যে ৭০০ এমটি অক্সিজেনের জোগান দিচ্ছি- গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দমন দিউ এবং নগর হাভেলিতে। ভারত তথা মুম্বইয়ের এই পরিস্থিতিতে আমাদের নিজেদের জন্য সবকিছু করতে আমরা সদাসতর্ক। করোনা হারেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।"
গত বছর আমরা "অন্ন সেবা " চালু করেছিলাম। বিশ্বের সবথেকে বড় খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি। ৫.৫ কোটি মানুষকে এই পরিষেবা দেওয়া হয়েছিল।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের আরও উদ্যোগ :
- মুম্বইয়ের দেউনারে স্পন্দন হলিস্টিক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় সাহায্য করেছিল RF।
- BMC-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মুম্বইয়ে এইচবিটি ট্রমা হাসপাতালে ১০ বেডের ডায়ালিসিস সেন্টার গড়েছে স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতাল।
রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন সম্বন্ধে :
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মানব-হিতৈষী শাখা রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন। দেশের উন্নয়নে অনুঘটকের কাজ করা যাদের লক্ষ্য। এর নেতৃত্বে রয়েছেন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারপার্সন নীতা আম্বানি। এই সংস্থা সবসময় প্রত্যেকের জীবনের মানোন্নয়ন এবং সার্বিক ভালোর জন্য বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছে। দেশের গ্রামীণ এলাকা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, বিপর্যয় মোকাবিলা, শহরের পুনরুজ্জীবন, কলা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের জন্য কাজ করে চলেছে। গোটা দেশের ৪৫ মিলিয়নের বেশি মানুষের জীবনকে স্পর্শ করতে পেরেছে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে ৪৪,৭০০-র বেশি গ্রাম এবং শহর।