কলকাতা: ভারতের ৭৪তম প্রজাতান্ত্রিক দিবসের প্রধান অতিথি ইজিপ্টের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ এল-সিসি। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও এখন শক্তি ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। ভারতের সঙ্গে ক্রমশ ভাল হয়েছে ইজিপ্টের কূটনৈতিক সম্পর্ক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী হয়েছে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। 


প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, শক্তিক্ষেত্রে দুই দেশের বোঝাপড়া আরও গভীর হয়েছে। আবর দুনিয়ায় ভারতের গুরুত্ব বৃদ্ধির পিছনেও দুই দেশের বোঝাপড়া রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, পাক-বিরোধী মঞ্চেও কার্যত ভারতকে সুবিধা করে দেয় ইজিপ্ট। নুপুর শর্মা-র ঘটনাতেও মৌন ছিল ইজিপ্ট। 


প্রজাতান্ত্রিক দিবসে মিত্র রাষ্ট্রের প্রধানদের, প্রধান অতিথি করার প্রথা রয়েছে। এবার সেই অতিথি হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন ইজিপ্টের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ এল-সিসি। 


গণবিক্ষোভ এবং তারপর...
২০১৩ সালের জুন মাস। গোটা ইজিপ্টে তখন তীব্র গণবিক্ষোভ। প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন মহম্মদ মোরসি, বিপ্লব-পরবর্তী ইজিপ্টে তিনিই প্রথম গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। গণবিক্ষোভ যখন চরমে। তখন তৎকালীন সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল আবদেল ফতাহ এল-সিসি ঘোষণা করেন যে যদি প্রেসিডেন্ট গণবিক্ষোভ সামলাতে না পারেন তাহলে পদক্ষেপ করবে সেনা। তার পরপরেই ঘটে সেনা অভ্যুত্থান। মহম্মদ মোরসিকে সরিয়ে আবদেল ফতাহ এল-সিসি-এর নেতৃত্বে তৈরি হয় সাময়িক সরকার (Acting Government)


২০১৪ সালে সেনা সর্বাধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করবেন বলে ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে মোট প্রদত্ত ভোটের সিংহভাগ পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। তারপরে ফের ২০১৮ সাল, সেই বছরেও প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভ করেন তিনি।  ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন ইজিপ্টের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। সেদেশেরই মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন। পরে ইংল্যান্ডের জয়েন্ট সার্ভিস কমান্ড এবং স্টাফ কলেজ থেকে অতিরিক্ত ট্রেনিং নেন তিনি। 


ক্রমশ উত্থান:
একেবারে প্রথম থেকেই সেনায় কর্মরত ছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে ক্রমশ উচ্চপদে ওঠেন। ২০১০ সালে সেদেশের মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের প্রধান হন তিনি। আরব বসন্তের সময় হোসনি মুবারক পদচ্যুত হয়েছিলেন। সেই বিদ্রোহের সময় থেকেই বাড়তে থাকে তাঁর ক্ষমতা এবং পরিচিতি। 'আরব বসন্ত' শেষের পরে সেনার সর্বোচ্চ পদে বসেন তিনি। বলা হয়ে থাকে, সেদেশের অন্য়তম ক্ষমতাশালী স্তম্ভ মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গেও যোগাযোগ-ভারসাম্য তৈরির দায়িত্ব ছিন তাঁর। তারপরে নির্বাচনের মাধ্যমে সেদেশের প্রেসিডেন্ট পদে বসেন মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম প্রধান মুখ মহম্মদ মোরসি। তিনিই আবদেল ফতাহ এল-সিসি-কে সেদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং সেনা সর্বাধিনায়ক পদে বসান। কিন্তু বছরখানেকের মধ্যেই আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন কারণে প্রবল গণবিক্ষোভের সম্মুখীন হন মহম্মদ মোরসি। প্রবল টালমাটাল পরিস্থিতির পরে, মোরসিকে সরিয়ে দেন আবদেল ফতাহ এল-সিসি। সেনার সাহায্যে Acting Government চলে কিছুদিন। তারপরে সেনার সর্বাধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে ২০১৪ সালে নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট পদে বসেন আবদেল ফতাহ এল-সিসি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের বার্তা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। অর্থনৈতিক অবস্থা ফেরাতে একাধিক সংস্কারের পথেও হেঁটেছেন তিনি।


তাঁর শাসনকাল নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগও। প্রথম থেকে সেনার হাতে বেশই ক্ষমতা দিয়েছেন বলে একটি অংশের দাবি। মোরসির সমর্থকদের কঠোর হাতে দমন করা হয় বলেও অভিযোগ হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন দমনপীড়নের অভিযোগও করে এসেছে। তারপরেও ২০১৮ সালে ফের প্রেসিডেন্ট পদে জেতেন তিনি। যদিও সেই নির্বাচন নিয়েও বিস্তর অভিযোগ করেছেন সেদেশের বিরোধীরা। দ্বিতীয় দফা পদে বসে সংবিধানে একাধিক পরিবর্তনও এনেছেন তিনি। শীর্ষস্থানীয় বিচারপতি নির্বাচন করার ক্ষমতাও এসেছে প্রেসিডেন্টের হাতে।


আরও পড়ুন: ORS-এর জনক, বঙ্গসন্তান দিলীপ মহলানবিশকে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ সম্মান, ঘোষণা কেন্দ্রের