নয়াদিল্লি: আর জি কর কাণ্ডে ঘটনাক্রম নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। বিশেষ করে এফআইআর দায়েরে কেন দেরি হল, সেই নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। সেই নিয়ে এবার রাজ্যের তরফে যুক্তি দেওয়া হল। রাজ্য জানিয়েছে, এফআইআর দায়েরর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট SOP (Standard Operating Procedure) রয়েছে। সেই অনুযায়ীই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে আর জি করের ঘটনায়। এমনকি নির্যাতিতার বাবার উল্লেখও করল রাজ্য। (RG Kar Supreme Court Hearing)
আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার শুনানি চলাকালীন অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ এবং ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এফআইআর দায়েরের সময় নিয়ে তর্ক বাধে। সকালে দেহ উদ্ধার হওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর কেন এফআইআর দায়ের হল প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা। সেই নিয়ে যুক্তি, পাল্টা যুদ্ধির মধ্যেই মধ্যাহ্নকালীন বিরতির সময় এসে পড়ে। (RG Kar Case)
দুপুর ২টোর পর ফের শুনানি শুরু হলে, এফআইআর-এ দেরি হওয়ার প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেখানে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিবল জানান, ২০১৮ সালে রাজ্য সরকারের তরফে এফআইআর দায়েরের প্রক্রিয়া নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। সেই SOP মেনেই এফআইআর দায়ের হয়। সকাল ৯টা বেজে ৩০ মিনিটে দেহ উদ্ধারের ১৪ ঘণ্টা পর কেন দেহ উদ্ধার হল, আবারও জানতে চান বিচারপতিরা।
এর জবাবে সিবল জানান, নির্যাতিতার বাবা চাইছিলেন, দেরিতে এফআইআর দায়ের হোক। এর পাল্টা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, নির্যাতিতার বাবার আইনজীবী আদালত কক্ষে উপস্থিত রয়েছেন। আদালত চাইলে তাঁর বক্তব্য শুনতে পারে। এতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, "কলেজের অধ্যক্ষের উচিত ছিল দেহ উদ্ধারের পর সেখানে আসা এবং এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেওয়া। তিনি এফআইআর করবেন। এত অপেক্ষা কেন করা হল?" এফআইআর দায়েরে এত দেরি হওয়ার সময়, অধ্যক্ষ কার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন, তাও জানতে চান প্রধান বিচারপতি।
আদালতের প্রশ্নের যথা সম্ভব চেষ্টা করেন সিবল। কিন্তু মধ্যাহ্নকালীন বিরতির আগে এবং পরে, রাজ্যের জবাবে অসন্তোষই প্রকাশ করে আদালত। এর পাশাপাশি, সিবিআই পলিগ্রাফ টেস্ট করাতে দেরি করছে কেন, জানতে চায় আদালত। এতে সিবিআই জানায়, শিয়ালদার CJM কোর্টে তাঁদের আবেদন জমা পড়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই পলিগ্রাফ টেস্ট হবে। এর পর আদালত জানায়, ২৩ অগাস্ট বিকেল ৫টার মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে CJM কোর্ট। সেই মতো পলিগ্রাফ টেস্ট হবে অভিযুক্তের।
আর জি কর মামলায় ঘটনাক্রম নিয়ে এদিন শুরু থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়ে। আদালত প্রশ্ন তোলে, FIR দায়েরের আগে কী করে ময়নাতদন্ত হল? সকাল সাড়ে ১০টায় অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়, সন্ধে সাড়ে ৬টা-সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত, এর পর রাত সাড়ে ১১টায় কেন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হল? অপরাধের জায়গা সুরক্ষিত করতেই বা এত দেরি হল কেন। এতক্ষণ ধরে কী হচ্ছিল? সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে টালা থানার ভূমিকাও। বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা মন্তব্য করেন, রাজ্য সরকার এই মামলায় যা করেছে তা ৩০ বছরের কর্মজীবনে কখনও দেখেননি তিনি। আর জি কর হাসপাতালের নন-মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের আচরণ সন্দেহজনক বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি তিনি। যদিও সিবল প্রতি মিনিটের টাইমলাইন আদালতে জমা দেন। কেস ডায়েরিতেও সবের উল্লেখ রয়েছে, সিবিআই-এর কাছে সব তথ্য থাকলেও, তা আদালতে পেশ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সিবল।