কলকাতা: বলিউডে পা রাখা মোরা নাম জোকার ছবি দিয়ে। কিন্তু প্রবল জনপ্রিয়তা দেয় ববি। গোলগাল, হাসি মুখের কিশোর আর ফিরে তাকাননি। অমিতাভ বচ্চন, বিনোদ খান্নায় উথালপাথাল অ্যাংরি ইয়ং ম্যানের যুগেও ব্যতিক্রমী ঋষি কপূর।

ঋষির জন্ম ১৯৫২-র ৪ সেপ্টেম্বর, পঞ্জাবে। ডাকনাম চিন্টু, সেই নামেই বলিউডে বেশি বিখ্যাত। ৩ ভাই, ২ বোন। বাবা রাজ কপূর, দাদু পৃথ্বীরাজ কপূর। পড়াশোনা ক্যাম্পিয়ন স্কুলে, সেখান থেকে মেয়ো কলেজ। রক্তেই অভিনয়। মামা প্রেম নাথ, রাজেন্দ্র নাথ। আবার বাবা রাজ, দুই কাকা শশী কপূর, শাম্মী কপূর প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা। বিখ্যাত কপূর পরিবারের ছেলে হওয়ায় ছবির দুনিয়ায় তাঁর প্রবেশ খানিকটা ছকবাঁধা ছিল। তবে বলিউড বরাবরই বড় পিছল জায়গা। নামজাদা বাবা মায়ের আদুরে ছেলেমেয়েরা অনেক সময়েই সুবিধে করতে পারেন না এখানে। ঋষির দাদা রণধীর, ভাই রাজীবও হারিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু রয়ে গেলেন ঋষি কপূর।



শুরুর দিকে শিশু অভিনেতা ছিলেন ঋষি। বাবার শ্রী ৪২০-তে পেয়ার হুয়া, ইকরার হুয়া গানে অন্য দুটি ছোট ছেলেমেয়ের সঙ্গে হেঁটে যান তিনি। তখন বয়স তিনের মত। পরে বলেছিলেন, দৃশ্যটি উতরে দেওয়ার জন্য নার্গিস চকোলেটের লোভ দেখিয়েছিলেন তাঁকে। এরপর ১৯৭০-এ মেরা নাম জোকার। রাজের ছোটবেলার চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে, যে তার দিদিমণির প্রেমে পড়ে যায়। এ জন্য জাতীয় পুরস্কারও পান তিনি। নায়ক হিসেবে প্রথম ছবি আরও ২ বছর পর, ববি। কালজয়ী ওই ছবি ঋষিকে সুপারস্টারের তকমা দেয়। ২০১২-য় এক সাক্ষাৎকারে ঋষি বলেছিলেন, ভুল ধারণা আছে, যে আমাকে নায়ক হিসেবে তুলে ধরার জন্য ববি তৈরি হয়েছিল। আসলে ছবিটা তৈরি হয় মেরা নাম জোকার-এর ধার চোকাতে। বাবা টিনএজ লাভ স্টোরি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, রাজেশ খান্নাকে সই করানোর মত টাকা ছিল না তাঁর কাছে। ববি তাঁকে এনে দেয় সেরা অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার।

কিন্তু যে ৫১টি ছবিতে ঋষি একক নায়ক ছিলেন, সেগুলির মধ্যে ১১টি মাত্র হিট করে। উল্টোদিকে ৪১টি মাল্টি-হিরো ছবির মধ্যে ২৫টি হিট। তাঁকে একা নায়ক করে যে ছবিগুলি তৈরি হয়, সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক হিট অবশ্যই ববি। এছাড়া রয়েছে লায়লা মজনু, রফু চক্কর, সরগম, কর্জ, প্রেম রোগ, নাগিনা, হানিমুন, চাঁদনি, হিনা, বোল রাধা বোল এবং ওয়াদা রহা। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু মাল্টি স্টারার ছবিতে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে অমর আকবর অ্যান্টনি, খেল খেল মেঁ, কভি কভি, হাম কিসিসে কম নেহি, বাদলতে রিস্তে, আপ কে দিওয়ানে ও সাগর। পাশাপাশি আজুবা, দিওয়ানা, দামিনী-লাইটনিং, গুরুদেব, দারার ও কারোঁবার। ১৯৯৯-এ পরিচালনা করে আ অব লওট চলেঁ ছবিটি। রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে শেষ ছবি ২০০স সালে কারোঁবার। প্রেম গ্রন্থ-এ এক সঙ্গে দেখা যায় রণধীর, ঋষি, রাজীব তিন কপূর ভাইকে, ছবিটি পরিচালনা করেন রাজীব কপূর।

ঋষি বিয়ে করেন সহশিল্পী নীতু সিংহকে, ১৯৮০-র ২২ জানুয়ারি। তার আগে এক সঙ্গে ১৫টি ছবি করেন তাঁরা। ঋষি-নীতুর দুই সন্তান, ঋদ্ধিমা ও রণবীর। ঋদ্ধিমা পেশায় ডিজাইনার, রণবীর প্রথম সারির নায়ক। দুই ভাইঝি করিশমা ও করিনাও প্রতিষ্ঠিত নায়িকা।



কয়েক বছর আগে টুইটারে যোগ দিয়েছিলেন ঋষি। পরিচয় হিসেবে লিখেছিলেন, বিখ্যাত বাবার ছেলে, বিখ্যাত ছেলের বাবা। দু’জনের মধ্যে হাইফেন। কিন্তু অসংখ্য বিতর্কিত টুইট করে যেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, তেমনই বিতর্ক বাড়ে। আবার লিখে ফেলেন আত্মজীবনী খুল্লাম খুল্লা: ঋষি কপূর আনসেন্সরড। তা নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি।