ইন্দৌর: ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হলেও, সেটি প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস নয় বলে মত বিজেপি-র অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবতের।  তাঁর দাবি, অযোধ্যার রামমন্দিরে 'রামলালা'র মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনেই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করেছে ভারত। সেই দিনটিকে পৌষ শুক্ল দ্বাদশীর পরিবর্তে 'প্রতিষ্ঠা দ্বাদশী' হিসেবে পালন করা উচিত। একই সঙ্গে, ওই দিনটিকে ভারতের 'প্রকৃত স্বাধীনতা' দিবস হিসেবে পালন করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন। ভাগবতের দাবি, বহু শতক ধরে চলে আসা 'পরচক্র' (শত্রুর হামলা)-কে পরাজিত করে ওই দিনই ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করে। 


২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দিরে 'রামলালা'র (শিশু বয়সের রাম) মূর্তি স্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠার একবছর পূর্ণ হয়েছে। সেই নিয়েই এমন মন্তব্য করলেন ভাগবত। মধ্যপ্রদেশের ইন্দৌরে 'শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট'-এর সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাইয়ের হাতে 'ন্যাশনাল দেবী অহল্যা পুরস্কার' তুলে দেন তিনি। আর সেখানেই এমন মন্তব্য করেন।


১৫ অগাস্ট কেন ভারতের কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস নয়, তার সপক্ষে ভারতের 'স্বকীয় পরিচয়'-এর যুক্তি দেন ভাগবত। তাঁর কথায়, "১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ইংরেজদের হাত থেকে 'রাজনৈতিক স্বাধীনতা' অর্জন করেছিল ভারত। এর পর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির দেখানো পথ অনুযায়ী লেখা হয় সংবিধান।  দেশের 'স্ব' থেকে তৈরি হয় সংবিধান তৈরি হলেও, দেশের সমকালীন চেতনা দ্বারা সংবিধান চালিত হয়নি।"



ভাগবত আরও বলেন, "ভগবান রাম, কৃষ্ণ এবং শিবের আদর্শ এবং জীবনবোধ ভারতের 'স্ব'তে শামিল রয়েছে। যাঁরা পুজো করেন, শুধুমাত্র তাঁদের দেবতা নন ওঁরা। মারতের 'স্ব'-কে খতম করতেই আক্রমণকারীরা মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। রামমন্দির আন্দোলন কোনও ব্যক্তির বিরোধিতা বা কোনও বিতর্কের জন্ম দেওয়ার আন্দোলন ছিল না। ভারতের 'স্ব'-কে পুনরুজ্জীবিত করতেই আন্দোলনের সূচনা হয়, যাতে ভারত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বকে পথ প্রদর্শন করতে পারে।" ভাগবতের দাবি, ভগবান রামের জন্মভূমিতে তাঁর মন্দির যাতে না হয়, তার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল কিছু শক্তি তাই আন্দোলন এত দীর্ঘায়িত হয়।


এ প্রসঙ্গে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়েরও উল্লেখ টানেন ভাগবত। জানান, 'ঘর ওয়াপসি' (মূল ধর্মে ফিরে আসা) নিয়ে সংসদ তখন উত্তাল। সেই সময় প্রণবের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। প্রণব তাঁকে বলেছিলেন, "ভারতের সংবিধান পৃথিবীর সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। আলাদা করে  আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা শেখানোর আর কি অধিকার আর কার আছে?" রুটি-রুজির চিন্তা ছেড়ে কেন মন্দির নিয়ে এত ভাবনা, এমন 'শেখানো' প্রশ্নও তাঁর দিকে ধেয়ে আসত বলে দাবি ভাগবতের। তাঁর কথায়, "আমিও পাল্টা প্রশ্ন করতাম, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর সমাজতন্ত্র নিয়ে এত কথা বলে, গরিবি হটাও স্লোগান দিয়ে, মানুষের জীবন নিয়ে এক ভেবেও আটের দশকে ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে ছিল? সেই তুলনায় ইজরায়েল, জাপানের মতো দেশ কোথায় পৌঁছে গিয়েছে?"


পুরস্কার গ্রহণ করে চম্পতও বক্তৃতা করেন। অযোধ্যায় নির্মিত রামমন্দিরকে ভারতের 'জাতীয় গৌরব' বলে উল্লেখ করেন। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি 'শ্রী অহল্যোৎসব সমিতি'র চেয়ারপার্সন। প্রতি বছর ওই সংস্থার তরফে পুরস্কার দেওয়া হয়।