তিরুঅনন্তপুরম: তরুণ প্রযুক্তি কর্মীর মৃত্যু ঘিরে এই মুহূর্তে উত্তপ্ত কেরলের রাজনীতি ২৬ বছর বয়সি ওই তরুণ BJP-র অভিভাবক সংস্থা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের (RSS) সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলেই জানা যাচ্ছে। ‘সুইসাইড নোট’ হিসেবে যে সাতপাতার ইনস্টাগ্রাম পোস্ট সামনে এসেছে, সেটিকে ঘিরেই বিতর্ক। কারণ মৃত্যুর কারণ হিসেবে RSS-এর শাখায় যৌন নির্যাতনের উল্লেখ ছিল ওই ‘সুইসাইড নোটে’। তার পরেও FIR-এ কেন RSS-এর নাম উল্লেখ করা হল না, প্রশ্ন তুলছেন কংগ্রেস-সহ BJP-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সঙ্ঘকে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেছে RSS। ওই তরুণের মৃত্যুতে সঠিক তদন্তের দাবি করেছে তারা। (RSS Kerala)

Continues below advertisement

কেরলের কোট্টায়াম জেলার এলিক্কুলামের বাসিন্দা, ওই তরুণ পেশায় সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। RSS-এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয় ওই তরুণের। গত বৃহস্পতিবার থাম্পানুরের ট্যুরিস্ট হোম থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।  মৃত্যুর আগে ইনস্টাগ্রামে যে লেখা পোস্ট করেন তিনি, সেটিকে ‘সুইসাইড নোট’ হিসেবেই ধরা হচ্ছে। কারণ ওই পোস্টে লেখা হয়, ‘কারও উপর রাগ নেই আমার, শুধু একজন ব্যক্তি ও এক সংগঠন ছাড়া। ওই সংগঠনের নাম RSS, যাতে বাবা (যিনি ভাল মানুষ ছিলেন) আমাকে যোগ দেওয়া করিয়েছিল। সেখানে আজীবন ট্রমায় ভুগেছি আমি, ওই সংগঠন এবং একজন ব্যক্তির হাতে’। (RSS News)

অভিযুক্তের পরিচয় প্রকাশ না করলেও, মৃত তরুণ অভিযুক্তকে ‘NM’ বলে উল্লেখ করেন। জানান, তিন-চার বছর বয়স থেকে লাগাতার তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। RSS এবং BJP-র সদস্য ছিলেন অভিযুক্ত এবং তাঁদের পড়শিও ছিলেন। পরিবারের লোকজন অভিযুক্তকে আত্মীয় মনে করতেন। সেই ব্যক্তিই তিন-চার বছর বয়সেই লাগাতার তাঁকে নিগ্রহ করেন বলে দাবি মৃত তরুণের। তিনি আরও জানান, অবসাদ, উৎকণ্ঠা তাঁকে গ্রাস করে নিচ্ছে। প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে। এভাবে বেঁচে থাকা অসহ্য হয়ে উঠছে তাঁর কাছে। থেরাপি করিয়ে, ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছে না।

Continues below advertisement

তবে শুধুমাত্র ‘NM’ নন, RSS-এর শাখায় আরও অনেকের হাতে তিনি যৌন নিগ্রহের শিকার বন বলেও দাবি করেন মৃত তরুণ। নিজেকে তিনি ‘ধর্ষণের শিকার’ বলে উল্লেখ করেন। লেখেন, ‘জানি, আমি একা নই। RSS-এর শাখায় আরও অনেক শিশুই অত্যাচারের শিকার হয়েছে। ওদের সঠিক কাউন্সেলিং হওয়া উচিত, যত্নের দরকার ওদের’। ছোট্ট বয়সে যৌনশিক্ষা কতটা প্রয়োজন, তাও উল্লেখ করেন মৃত তরুণ। আর বিষয়টি সামনে আসতেই তেতে উঠেছে কেরলের রাজনীতি। কমিউনিস্ট পার্টি, তাদের যুব সংগঠন DYFI, লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। কেরলে DYFI-এর সাধারণ সম্পাদক ভিকে সনোজের দাবি, “RSS-এর অমানুষিক চেহারা সকলের সামনে চলে এল।” 

কেরলের ওয়েনাডের সাংসদ, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয়ঙ্কা লেখেন, ‘RSS-কে এই সব অভিযোগের তদন্ত করতে দিতে হবে। সুইসাইড নোটে ওই তরুণ জানিয়েছেন, RSS-এর সদস্যদের হাতে বার বার নিগ্রহের শিকার হন তিনি। উনি একা নন, RSS-এর শিবিরে আরও অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন। এটা সত্যি হলে, ভয়ঙ্কর। লক্ষ লক্ষ শিশু, কিশোর দেশের সর্বত্র ওই শিবিরে অংশ নেয়। RSS নেতৃত্বকে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে’। 

বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেসের পবন খেরা। তিনি বলেন, “২৬ বছরের এক তরুণ নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন। তাঁকে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা হয়েছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে ওঁর সঙ্গে। বাবা চার বছরের ছেলেকে RSS-এর শাখায় পাঠিয়েছিলেন। ছেলে ভাল কিছু শিখবে বলে বিশ্বাস ছিল তাঁর। কিন্তু RSS-এর শাখায় চার বছরের নিষ্পাপ শিশুর উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে। এর চেয়ে মর্মান্তিক কিছু হতে পারে না। ওই তরুণ একজনের নাম লিখে গিয়েছেন, জানিয়েছেন, আরও লোক আছে। এটা একা ওই তরুণের উপর ঘটা অত্যাচারের বিষয় নয়, RSS-এর শিবিরে অনেকের উপর যৌন নির্যাতনের কথা বলে গিয়েছেন তিনি। RSS নিজেকে সমাজ সংস্কারক বলে দাবি করে। অথচ নিজেদের নাম পর্যন্ত নথিভুক্ত করেনি। সদস্যদেরও নাম নথিভুক্ত নেই।” ওই তরুণের মৃত্যুতে ১০ অক্টোবর ভারতীয় নাগরিক ন্যায় সংহিতার আওতায় মামলা দায়ের করে কেরল পুলিশ। কিন্তু তাতে RSS-এর নাম নেই কেন, প্রশ্ন উঠছে। 

বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে কেরলে RSS-এর শাখার আধিকারি তরফে যাবতীয় অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করা হয়। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করে বিবৃতি দেয় RSS কোট্টায়ম, যাতে লেখা হয়, ‘ওই তরুণের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক। কীভাবে ওঁর এমন পরিণতি হল, মৃত্যুর পর পরই ইনস্টাগ্রাম ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে যে সুইসাইড নোট মিলেছে, তা নিয়ে তদন্ত প্রয়োজন। ওতে কিছু সন্দেহজনক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ রয়েছে সঙ্ঘের বিরুদ্ধে, যেগুলিকে ওঁর মৃত্যুর কারণ বলা হচ্ছে’।