কিভ: আরও ভয়াবহ দিকে মোড় নিয়েছে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ। যুদ্ধের নবম দিনে ইউক্রেনের জেপোরজিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র দখল করেছে রাশিয়া। পুতিন বাহিনীর হামলার সময় ওই পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন লেগে যায়। যা নিয়ে প্রবল আতঙ্কে ইউক্রেন প্রশাসন। শুধু ইউক্রেনই নয়, প্রবল উদ্বেগে গোটা ইউরোপ এবং পড়শি দেশগুলিও। উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার তরফেও। 


জেপোরজিয়া (zaporizhzhia) পারমাণবিক কেন্দ্রটি  ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তারই ৬টি রিঅ্যাক্টরের মধ্যে একটিতে আগুন লেগেছে। এই ঘটনায় ফিরে এসেছে ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল দুর্ঘটনার স্মৃতি। পরমাণু কেন্দ্রে যাবতীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হল কুলিং ডাউন। সহজ ভাষায় বললে রিঅ্যাক্টরের তাপমাত্রা লাগামে রাখার প্রক্রিয়া। কোনওভাবে সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা থেকে যায়। সোভিয়েত আমলে ঠিক যেমনটি হয়েছিল ইউক্রেনের মাটিতে থাকা চেরনোবিল (chernobyl) পারমাণবিক কেন্দ্রেও।  জাপোরজিয়া কেন্দ্রেও ঠিক তেমন আশঙ্কাই করা হচ্ছে। 


কিন্তু কেন এই আশঙ্কা?
১. আগুন লাগার কারণে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে (nuclear reactor) ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় জ্বালানি রিঅ্যাক্টরের সুরক্ষাবলয় ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। তেমনটা হলে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে পরিবেশে।


২. আগুনের ফলে যদি বিদ্যুৎ পরিবহনে সমস্যা হয়, তাহলে ডিজেল জেনারেটর বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কুলিং সিস্টেম (cooling process) চালু রাখবে। কিন্তু, জেনারেটরের বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা সীমিত। তার ফলে নিউক্লিয়ার রিঅ্য়াক্টরের কুলিং প্রসেস বা ঠান্ডা রাখার প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে সেখানে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। চেরনোবিল শুধু নয়, জাপানের ফুকুসিমাতেও সুনামির ধাক্কায় কুলিং সিস্টেম বসে গিয়ে পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটেছিল (neuclear meltdown)।


৩. অস্ত্র বা বোমার আঘাতে রিঅ্য়াক্টরের কাঠামো ভেঙে গেলেও প্রবল বিস্ফোরণ হতে পারে।


৪. ইউক্রেন পারমাণবিক বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। সে দেশে একাধিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর রয়েছে। যুদ্ধের জন্য অন্য কোনও পারমাণবিক কেন্দ্রে একই দুর্ঘটনা ঘটবে না এমন নিশ্চিত হতে পারছে না কেউ। 


কেমন হবে ক্ষতির বহর?
১. জাপোরজিয়ায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ১০টি চেরনোবিল দুর্ঘটনার সমান হবে, বলেছেন ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী।


২. পরমাণু বিস্ফোরণ হলে গোটা ইউরোপে তার প্রভাব পড়বে। মারা যাবেন অসংখ্য নাগরিক।


৩. জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির ক্ষতিকর প্রভাব এখনও যায়নি। চেরনোবিল এলাকাও এখনও বিপদমুক্ত নয়। তেজস্ত্রিয় জ্বালানির আয়তনের নিরিখে তার থেকেও শক্তিশালী জাপোরজিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র। এখানে তেমন কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েক শতাব্দী ধরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে গোটা ইউক্রেন।


৪. পারমাণবিক দুর্ঘটনার প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত যায়, ফলে প্রভাব এড়াতে পারবে না ইউরোপের অধিকাংশ দেশই। কৃষি, অর্থনীতি থেকে পরিবেশ, ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়বে সকলেই।



পারমাণবিক কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে আপাতত নানা কাজ চলছিল ওই পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে। ফলে বন্ধই ছিল অধিকাংশ রিঅ্যাক্টর। আগুনও আপাতত নিভিয়ে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও যুদ্ধের ফলে ফের সেখানে হামলার ঘটনা ঘটলে কী হবে, সেটাই ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। আগুন লাগা চিন্তার বিষয় হলেও এখনই দুর্ঘটনার কোনও আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন পরমাণুবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ। তিনি বলেন, 'এটি মূলত পারমাণবিক চুল্লি, বোমা তৈরি হয় না। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন থেকে ভয়ানক বিস্ফোরণের সম্ভাবনা নেই। পারমাণবিক চুল্লিগুলিতে দুর্ঘটনা রোখার জন্য একাধিক ব্যবস্থা থাকে।'


আরও পড়ুন: রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন, জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বাইডেনের