নয়াদিল্লি: কিছুদিন আগে কৃষি ভবনে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ ঘিরে, নজিরবিহীন পরিস্থিতির সাক্ষী ছিল রাজধানীর রাজনীতি। অবস্থানরত তৃণমূল নেতাদের টেনে হিঁচড়ে পুলিশ লাইনে নিয়ে গিয়ে, আটক করে দিল্লি পুলিশ। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। নির্ধারিত সময় সন্ধে ছটায়, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর দেখা না পাওয়ার অভিযোগে, অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ( Abhishek Banerjee ) নেতৃত্বে, কৃষি ভবনেই অবস্থানে বসে তৃণমূল ( TMC ) । সেখান থেকে পাঁজাকোলা করে, টেনে হিঁচ়ড়ে বার করে, তাঁদের আটক করে নিয়ে যায় দিল্লি পুলিশ। তারপর যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ( Sadhvi Niranjan Jyoti ) দাবি করেছিলেন, তিনি তৃণমূলের জন্য় অপেক্ষা করে রাত সাড়ে আটটা অবধি দফতরেই ছিলেন।
দিল্লি থেকে সেদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, দিল্লি চলোর পর এবার রাজভবন চলো। ঘোষণা মতো তৃণমূল সেই অভিযানও করেছে ৫ অক্টোবর। রাজ্যপালের দেখা না পাওয়া অবধি ধর্নামঞ্চেই থাকার শপথ নিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই মধ্যে তৃণমূলের দিল্লি কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে তোপ দাগলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী। সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি বলেন, তৃণমূলের প্রতিনিধি দল আসলে তাঁর সঙ্গে দেখাই করতে চায়নি। 'প্রতি আধঘণ্টা অন্তর ওঁরা নিজেদের দাবি পাল্টেছেন। প্রথমে তাঁরা বলেন ৫ সাংসদ আসবেন, পরে বলেন ১০ জন সাংসদ যাবেন। শেষে ওঁরা বলেন সাধারণ মানুষকেও ঢুকতে দিতে হবে। দিল্লিতে ওঁরা তামাশা করতে এসেছিলেন' , মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি এর আগে বলেছিলেন, ' কাল (মঙ্গলবার) থেকে সব চ্যানেলে দেখছি, তৃণমূল সাংসদরা বলছেন, মন্ত্রী নাকি দেখা করতে রাজি হননি। গতকাল কাল (মঙ্গলবার) ও পরশু (সোমবার) নিজের জায়গায় ছিলাম। যখন জানতে পারি, তৃণমূল সাংসদরা আমার সঙ্গে দেখা করতে চান, সব কাজ ছেড়ে কানপুরের ফ্ল্যাট থেকে রওনা হই। ফ্লাইট দেরি হয়ে গেলে, সমস্য়ায় পড়তে হতে পারে। একথা ভেবেই ওদের (তৃণমূলের প্রতিনিধি দল) সন্ধে সাড়ে ৬টায় সময় দিয়েছিলাম। সন্ধে সাড়ে ৬টা থেকে নিজের অফিসে বসেছিলাম। আমার ব্যক্তিগত সচিব ওদের (তৃণমূলের প্রতিনিধি দল) বারবার অনুরোধ করছিলেন। প্রথমে ওরা জানায় (তৃণমূলের প্রতিনিধি দল) পাঁচজন দেখা করবেন। আমি বলি, পাঁচজনই আসুন। তারপর বলল, দশজন আসবেন। আমি বললাম, বেশ দশজনই আসুন। আধঘণ্টা পর, সন্ধে ৭টা নাগাদ বলল, আমরা সব সাংসদরা দেখা করতে চাই। আমি তাতেও সম্মত হয়ে বলি, সব সাংসদই আসুন। আমি দেখা করব। আমি আধঘণ্টা অপেক্ষা করলাম। ২৫ মিনিট পর বার্তা এল, আগে আমাদের সঙ্গে যে জনতা এসেছে, তাঁদের সঙ্গে দেখা করুন। তখন আমি বলি, মনরেগার যে ইস্যু নিয়ে আপনারা এসেছেন, আগে সেটা নিয়ে টেবিলে বসুন। আপনারা আপনাদের রেকর্ড দিন। আমিও আমার রেকর্ড আপনাদের সামনে রাখব। সামনাসামনি কথা বললে সামনে তো আসতে হবে। ওরা (তৃণমূলের প্রতিনিধি দল) বলতে থাকে, আগে জনতার সঙ্গে দেখা করুন। আমি বলি, জনতার সঙ্গে তো আমি দেখা করে নেব। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আপনারা এসেছেন, যার জন্য আমাকে বৈঠকে ডেকেছেন, আগে সেটা নিয়ে কথা হোক। ওদের (তৃণমূলের প্রতিনিধি দল) অভিযোগ, আমাদের আদরণীয় মোদি সরকার বাংলার টাকা আটকে রেখেছে। যদি টাকা আটকানোই আমাদের উদ্দেশ্য হত, মূলত এই ইস্যুতেই ওরা (তৃণমূলের প্রতিনিধি দল) পালিয়েছে আমার থেকে। নইলে আমি ওদের সামনেই তথ্য রাখতাম। যে UPA সরকারে ওরা (তৃণমূল) সামিল ছিল, সেই সময় মনরেগাতে স্রেফ ১৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। ৯ বছরে মোদি সরকার ৫৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। পক্ষপাত করলে এই অঙ্কের বরাদ্দ হত না।'
যদিও সাধ্বীর দাবি মানছে না তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, মন্ত্রী সন্তানহারা পিতাদের সঙ্গে দেখা করতে চায়নি। পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছে।