মুম্বই: লাগাতার প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে চলেছেন সলমন খান। হুমকি পেয়েছেন শাহরুখ খানও। সেই আবহেই হামলার শিকার হলেন অভিনেতা সেফ আলি খান। নিজের বাড়িতে তাঁকে হামলার শিকার হতে হল। আঘাত এত গুরুতর যে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার চলছে অভিনেতার। এমন পরিস্থিতিতে মায়ানগরীতে তারকাদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে কি না, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। (Saif Ali Khan Attacked)
বুধবার গভীর রাতে মুম্বইয়ের বান্দ্রায় নিজের বাড়িতে হামলার শিকার হন সেফ। জানা গিয়েছে, রাত ২.৩০টে নাগাদ বাড়িতে ঢুকে পড়ে এক দুষ্কৃতী। সেই সময় ছেলে তৈমুর এবং জহাঙ্গিরের ঘরে ছিলেন সেফ। সেই সময়ই হামলা চালানো হয় তাঁর উপর। এর পর দু'জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। (Mumbai Police)
জানা গিয়েছে, ধারাল অস্ত্র দিয়ে সেফকে আঘাত করে ওই দুষ্কৃতী। তাঁর গলায়, হাতে, পিঠে আঘাত করা হয়। পিঠে ধারাল বস্তু এখনও ঢুকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মোট ছয় জায়গায় আঘাত পেয়েছেন সেফ। মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে অস্ত্রোপচার চলছে তাঁর। পুলিশ এবং অপরাধ দমনকারী সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে।
আর তাতেই বলিউডের তারকাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ মুম্বইয়ের যে জায়গায় সেফ-এের বাড়ি, সেটি কড়া নিরাপত্তায় মোড়া। ওই এলাকায় বলিউডের তাবড় তারকারা থাকেন। সেখানে নজরদারি এড়িয়ে কী করে দুষ্কৃতী সে-এের বাড়িতে ঢুকে গেল, উঠছে প্রশ্ন। একই সঙ্গে, ওই দুষ্কৃতী একাই যুক্ত ছিল, না কি নেপথ্যে আরও কেউ রয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। চুরি বা ডাকাতি করতে এলেও, ধারাল অস্ত্র দিয়ে সেফকে কোপানো হল কেন, তার উত্তরও মেলেনি।
গত দু'বছর ধরে লাগাতার প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে চলেছেন সলমন। তাঁর বাড়িতে এলোপাথাড়ি গুলি পর্যন্ত চলেছে। হুমকি পেয়েছেন শাহরুখও। তাঁদের বাড়ির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও। তারই মধ্যে তারকাজগতের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল যে রাজনীতিক বাবা সিদ্দিকি, তাঁকেও গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। পর পর এই সব ঘটনায় নাম জড়িয়েছে কুখ্যাত মাফিয়া লরেন্স বিশ্নোই গ্যাংয়ের। কৃষণসার হরিণ মামলা নিয়ে সলমনের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে অসন্তোষের কথা জানিয়েছ তারা। সলমনের বাড়িতে গুলি চালানোতেও তাদের সংযোগ পাওয়া গিয়েছে। আবার লরেন্সের গ্যাংয়ের নাম করেই হুমকি আসে শাহরুখের কাছে। বাবা সিদ্দিকির খুনেও তাদের নামই পাওয়া গিয়েছে।
পর পর এমন ঘটনায় মুম্বই পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ লরেন্স গুজরাতের জেলে বন্দি রয়েছেন। সেখান থেকে টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন তিনি, প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন সলমনকে। তার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, উঠছে প্রশ্ন। কারও কারও মতে, আট বা নয়ের দশকে মুম্বই দাউদ ইব্রাহিম এবং মাফিয়াদের যে রাজত্ব ছিল, লরেন্সও সেই রাজত্ব কায়েম করতে চান মুম্বইয়ে। তাঁর গ্যাং ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
এমনকি কানাডা থেকে লরেন্সের ভাই এবং সহযোগীরা মিলেই পঞ্জাবের গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে খুন করে। কানাডা সরকারও সেই নিয়ে ভারতের দিকে আঙুল তুলেছিল। তার পরও কেন কেন্দ্রের তরফে বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা চোখে পড়ছে না প্রশ্ন উঠছে।
এদিন সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে)-ও। দলের নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদি লেখেন, 'মুম্বইয়ের লজ্জা। আরও একজন হাইপ্রোফাইলের উপর হামলা। সেফ-এর উপর হামলায় মুম্বই পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পর পর এমন ঘটনায় একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, বিশিষ্ট জনেদেরই বেছে বেছে নিশানা করা হচ্ছে। বাবা সিদ্দিকির পরিবার এখনও বিচারের অপেক্ষায়। বুলেটপ্রুফ বাড়িতে বাস করতে বাধ্য হয়েছেন সলমন খান। এখন আবার আক্রান্ত সেফ। ওই এলাকায় তাবড় তারকারা থাকেন। সেখানের নিরাপত্তা আরও নিশ্ছিদ্র হওয়া উচিত। তারকারাও যদি নিরাপদ না হন, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে'?
ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে এদিন সেফের শ্যালিকা করিশ্মা কপূরকে ফোন করেন। সেফের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন তিনি। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'সেফ আলি খানির উপর হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত। ওঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ওঁর পরিবার এই কঠিন সময় সামলে ওঠার শক্তি পাক। '