নয়াদিল্লি: বিজেপি-র বিরুদ্ধে বিরোধী শিবির I.N.D.I.A জোটের ভিত্তি প্রস্তর তাঁর হাতেই তৈরি বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বিরোধী জোটেক নেতৃত্ব দিতে রাজি বলে জানিয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্যের রেশ পৌঁছেছে দেশের জাতীয় রাজনীতিতেই। মমতার হাতে I.N.D.I.A জোটের রাশ তুলে দিতে রাজি অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মতো দল। কিন্তু কংগ্রেস মমতাকে জোটের মাথায় বসাতে নারাজ বলে জানা গেল। (Mamata Banerjee)
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জোট গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যায় মমতাকে। সেই প্রস্তাব নিয়ে দিল্লি, মুম্বইও পৌঁছন তিনি। দফায় দফায় বৈঠক করেন বিরোধী শিবিরের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে। কিন্তু তিনি যতটা তৎপরতা দেখিয়েছিলেন, কংগ্রেসের তরফে তেমন সাড়া মেলেনি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামেন রেখে বিরোধী দলগুলি একছাতার নীচে এসে জড়ো হলে, পারস্পরিক বোঝাপড়ায় ফারাক ছিল চোখে পড়ার মতোই। মমতা যদিও বরাবরই জানিয়েছেন, তিনিই I.N.D.I.A জোটের নামকরণ করেন। জোটধর্ম পালনে প্রস্তুত। (I.N.D.I.A Alliance)
কিন্তু যত সময় এগোয়, ততই কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব স্পষ্ট হয়। লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে আসন সমনঝোতা পর্যস্ত ভেস্তে যায়। অন্য দিকে, একের পর এক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর, বিরোধী জোটের নেতৃত্বে কংগ্রেসকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে অন্য বিরোধী দলগুলিই। আর সেই আবহেই মমতাকে জোটের মাথায় বসানোর সপক্ষে সমর্থন আসতে শুরু করেছে, যার মধ্যে একেবারে প্রথমেই রয়েছে সমাজবাদী পার্টি।
মমতা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দিতে রাজি বলে মন্তব্য করার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র উদয়বীর সিংহ। তাঁর কথায়, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি I.N.D.I.A জোটকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী হন, সেক্ষেত্রে বাকিদের বিষয়টি নিয়ে ভআবনা-চিন্তা করা উচিত, ওঁকে সমর্থন জানানো উচিত। এতে জোটের হাত শক্ত হবে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে রুখে উনি দেখিয়ে দিয়েছেন। ওঁর জন্য সহানুভূতি রয়েছে আমাদের। অনেক আগে থেকেই ওঁর সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক আমাদের।" মমতাকে জোটের মুখ করা হলে, তাঁরা ১০০ শতাংশ সমর্থন জানাবেন বলেও মন্তব্য করেন উদয়বীর।
শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের কথা জানি আমরা। আমরা চাই মমতা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা সকলে একজোট। কোনও মতভেদ থাকলেও, তা ক্ষুদ্র। কলকাতা গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলব।" লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি লালুকে জোটের রূপকার বলে উল্লেখ করেন যদিও, কিন্তু মমতার প্রশংসাও করেন তিনি। মৃত্যুঞ্জয় বলেন, "বিজেপি-র বিরুদ্ধে জোটের আসল রূপকার লালুপ্রসাদ যাদব। ওঁর উদ্যোগেই পটনায় I.N.D.I.A জোটের বৈঠক হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই বৈঠকে শামিল হন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ রাজ্যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সবে ঝাড়খণ্ডে সাফল্য মিলেছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে মজবুত। ২০২৫ সালে বিহারের পালা। বিজেপি-র বিরুদ্ধে আমাদের জোট ঐক্যবদ্ধ।"
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল বলেন, "বাংলা ওঁর (মমতার) কাছে প্রধান। বিরোধীদের প্রয়োজন ছিল বলেই I.N.D.I.A জোটর সূচনা করেন। দিল্লিতে কোনও পদের আকাঙ্খা নেই ওঁপ। কিন্তু দায়িত্ব পেলে বাংলায় বসেই সহজে জোটের দায়িত্ব সামলাতে পারবেন। বাংলায় মমতা যে মডেল তৈরি করেছেন, তা বিজেপি-কে আটকাতে সফল। মমতা এবং হেমন্ত সরেন বিজেপি-র বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে সফল। কারও বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই, কিন্তু কংগ্রেসের আত্মসমীক্ষা করা উচিত যে, সরাসরি লড়াইয়ে কেন বিজেপি-কে হারাতে পারছে না ওরা।"
মমতাকে জোটের মাথায় বসানোর সপক্ষে কিছু না বললেও, কংগ্রেসের সমালোচনা করেছে বামেরাও। ডি রাজার কথায়, "কংগ্রেসের উচিত আত্মসমীক্ষা করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে I.N.D.I.A জোটের বৈঠক ডাকা অত্যন্ত জরুরি। কংগ্রেস হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে শরিকদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি। I.N.D.I.A জোটের শরিকদের কথা শুনলে হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের ফলাফল অন্য হতো।" সমালোচনার মুখে পড়ে কংগ্রেস নেত্রী বর্ষা গায়কোয়াড় বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন মনে করতে পারেন, কিন্তু আমরা তেমন ভাবছি না। ওঁর কথায় ওঁর দল চলতে পারে। আমরা কংগ্রেসের কথায় চলি।" এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোটের শরিক, নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের মুখপাত্র নীরজ কুমার বলেন, "মমতাদির বয়ানেই স্পষ্ট যে জোটের অন্দের মতভেদ রয়েছে। এই মতানৈক্যের কারণ কে, তা ওরাও জানে। NDA জোট মানুষের সেবায় নিয়োজিত।" বিজেপি-র মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নকভির কথায়, "I.N.D.I. জোটে পরিবার অনেক, কিন্তু আকাঙ্খা একটাই, সকলে নিজের আকাঙ্খা পূরণ করতে চায়। ক্ষমতায় আসতে পারবেন না জেনেই জোটের প্রধান হওয়ার ইচ্ছে।"