নয়াদিল্লি: শেয়ার বাজারে কারচুপি, জালিয়াতির অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির (Adani Group)। গৌতম আদানি (Gautam Adani) এবং তাঁর সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত সময় চাইল ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিওরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI)। শেয়ার বাজারে কারচুপির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আরও ছ'মাস বাড়তি সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) আবেদন জানাল তারা। শনিবার শীর্ষ আদালতে সেই মতো আর্জি জানানো হয়েছে (Hindenburg Research)। 


সুপ্রিম কোর্ট দু'মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল


গত ২ মার্চ, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI-কে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। শেয়ারে দামে গরমিল থেকে নিয়ম লঙ্ঘন, লেনদেন নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ তা জন্য দু'মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়। তদন্তে উঠে আসা তথ্য সম্বলিত বিশদ রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয় SEBI-কে।  



শুধু তাই নয়, শীর্ষ আদালতের তরফে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গড়ে দেওয়া হয়। আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণায় যে শেয়ারবাজারে কারচুপি, জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভুয়ো সংস্থা মারফত ঘুরপথে, করফাঁকি দিয়ে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের কতটা ঝুঁকি রয়েছে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই বিশেষজ্ঞ কমিটিকে। 


কিন্তু শনিবার শীর্ষ আদালতে সময়সীমার মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে SEBI. তারা জানিয়েছে, আদালতের গড়ে দেওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে এপ্রিলে দু'টি বৈঠক হয়েছে তাদের। এখনও পর্যন্ত তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, কী কী তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা বিশদে জানানো হয়েছে। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ যে ১২টি সন্দেহজনক লেনদেনের কথা উল্লেখ করেছে, তা খতিয়ে দেখতে অন্তত ১৫ মাস সময় লাগবেই। কারণ লেনদেনগুলি অত্যন্ত জটিল। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্ক থেকেও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। অন্তত ছ'মাস সময় পেলে তদন্তকে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করবে তারা।



আরও পড়ুন: Cyber Fraud: আপনার স্মার্টফোনে আছে এই ১৯ অ্যাপ ? এখনই ডিলিট না করলে ভুগবেন !


তবে SEBI-র এই আবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র তীব্র সমালোচনা করেছেন SEBi-র। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, 'ইয়ার্কি হচ্ছে। ২০২১ সালে অক্টোবর থেকে তদন্ত করছে SEBI. জুলাই মাসে আমার চিঠির জবাবও দিয়েছিল। নিয়ম লঙ্ঘন চোখে পড়েছে বলে মেনে নিলেও. আরও প্রিয় শিল্পপতিকে বাঁচাকে আরও ছ'মাস সময় চাওয়া হচ্ছে, যাতে ওই শিল্পপতি সবকিছু ধামাচাপা দিতে অতিরিক্ত সময় পান হাতে'।


গত ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের তরফে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কারচুপি এবং জালিয়াতির ভূরি ভূরি অভিযোগ তোলা হয়। গোটা বিশ্বের কর্পোরেট ইতিহাসে এতবড় দুর্নীতি আগে হয়নি বলে দাবি করে তারা। শেয়ারবাজারে কারচুপি থেকে জালিয়াতি, আর্থিক তছরুপের মতো হাজারো অভিযোগ তোলে তারা। আদানি গোষ্ঠী যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে, কিন্তু তার পর থেকে ব্য়বসায় লাগাতার তাদের গ্রাফ নামতে দেখা গিয়েছে। গত কয়েক মাসে শেয়ার বাজারে প্রায় ১০০ বিলয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে তাদের। 


বিরোধীরা সরব হলেও, আদানিকে নিয়ে নীরব কেন্দ্র


আর আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ নিয়ে তেতে উঠেছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও। কারণ গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই অধুনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির দহরম মহরম রয়েছে বলে দাবি বিরোধীরা। তাই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে একের পর এক বিমানবন্দর, সরকারি প্রকল্পের বরাত নামমাত্র মূল্যে আদানির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ভারতীয় জীবন বিমা, রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কে মজুত সাধারণ মানুষের হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা আদানি গোষ্ঠীতে ঢেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে সংসদ উত্তাল হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আদানির সমীকরণের প্রশ্নে তেতে ওঠে গোটা দেশ। তবে মোদি এ ব্যাপারে নীরবতাই পালন করছেন।