নয়াদিল্লি: জঙ্গি হামলায় ফের রক্তাক্ত জম্মু ও কাশ্মীর। এবার প্রাণ হারালেন এক আধিকারিক-সহ চার জওয়ান। জম্মুর ডোডায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিলেন তাঁরা। এই নিয়ে গত ৩২ মাসে শুধুমাত্র জম্মুতে জঙ্গিতের হাতে প্রায় ৭০ জনের প্রাণ গেল। পর পর যে ভাবে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে উপত্যকায়, তাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। (Jammu & Kashmir Terror Attacks)


সোমবার রাতে জম্মুর ডোডায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে ভারতীয় সেনা এবং উপত্যকা পুলিশের যৌথ বাহিনী।  এলাকায় জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুরু হয় অভিযান। রাত ৯টা নাগাদ জঙ্গিদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। শুরু হয় গুলি বিনিময়। এর পর একে একে জওয়ানদের মৃত্যুর খবর সামনে আসে। (Jammu Terror Attacks)


এই আবহেই উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান উঠে আসছে-



  • গত ৯ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত জম্মুতে পাঁচটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, যাতে আট জওয়ান এবং ১০ নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

  • ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত জম্মুতে ৩১টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাতে ৪৭ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং ১৯ জন নিরীহ নাগরিক মারা গিয়েছেন। এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৪৮ জঙ্গির। 

  • অন্য দিকে, ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত কাশ্মীরে ২৬৩টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে ৬৮ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং ৭৫ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সেনার অভিযানে মারা গিয়েছে ৪১৭ জঙ্গি।


কাশ্মীরের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও, জম্মুতে জঙ্গি হামলার ঘটনা যারপরনাই বেড়ে গিয়েছে।  সেখানে জঙ্গিদের আনাগোনা যেমন বেড়েছে, ঘন ঘন হামলাও হচ্ছে। হামলার ধরনও পাল্টে গিয়েছে। বিশেষ করে পুণ্যার্থী এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে হামলা চালানোর প্রবণতা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে সকলের।


আরও পড়ুন: Doda Encounter: কাশ্মীরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই, শহিদ সেনা আধিকারিক সহ ৪ সেনা জওয়ান


জম্মুতে জঙ্গিদের এই অতি সক্রিয়তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত তিন বছর ধরে নতুন করে উপত্যকাকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা চলছে।  বিশেষ করে চন্দ্রভাগা নদী উপত্যকার অন্তর্গত ডোডা, কিশতওয়ার, কাঠুয়া, রামবন, উধমপুর, রিয়াসি এবং দক্ষিণেপ পীর পঞ্জল, রাজৌরি এবং পুঞ্চে জঙ্গিরা সক্রিয় হয়ে উঠছে।


২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের পর চিনের মোকাবিলা করতে জম্মু থেকে সেনাবাহিনীর বড় অংশকে লাদাখে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সুযোগেই পাকিস্তান থেকে জঙ্গিরা জম্মুতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। জম্মুতে জঙ্গিরা ক্রমশ তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তার করছে বলে মত তাঁদের। এর আগে, নয়ের দশকে ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল জম্মুকে। আবারও পরিস্থিতি সেদিকে এগোতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরে নাশকতামূলক হামলা কমেছে, সেনাকে লক্ষ্য করা পাথর ছোড়া, সামাজিক অশান্তি বন্ধ হয়েছে বলে এযাবৎ দাবি করে আসছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে জঙ্গিদের উৎপাত আগের থেকে অনেকটাই কমে এসেছে বলে দাবি তাদের। কিন্তু জম্মুর পরিস্থিতি চিন্তা বাড়াচ্ছে দিল্লির। কারণ জঙ্গিদের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কাশ্মীরের চেয়ে জম্মু প্রাকৃতিক ভাবেই প্রতিকূল। পাহাড়, ঘন জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে সেনা। কাশ্মীরের মতো জম্মু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বাস রয়েছে। জঙ্গিরা সেখানে সাম্প্রদায়িক উস্কানিও জোগাচ্ছে বলে খবর উঠে আসছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তান থেকে ২০-২৫ কট্টরপন্থী জঙ্গি উপত্যকায় ঢুকেছে।


তাদের একটি দল পুঞ্চ-রাজৌরি এবং অন্য একটি দল কাঠুয়া-ডোডা-বসন্তগড়ে ঘাঁটি গেড়েছে। উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে গত মাসেই জরুরি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। সন্ত্রাসের মোকাবিলায় সেনার হাতশক্ত করার কথা ওঠে বৈঠকে। কিন্তু তার পরও হামলা আটকানো যাচ্ছে না।