নয়াদিল্লি: দলের সঙ্গে সংঘাত আরও বাড়ল শশী তারুরের। Operation Sindoor নিয়ে বিদেশে দৌত্য করতে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেখানে যে মন্তব্য করেছেন শশী, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদির ‘চামচাগিরি’তে শশী বিজেপি নেতাদেরও ছাপিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য তাদের। (Shashi Tharoor)
ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়া এবং Operation Sindoor নিয়ে দিল্লির অবস্থান তুলে ধরতে এই মুহূর্তে পানামা সিটিতে রয়েছেন তারুর। সেখানে তিনি বলেন, “চার দশক ধরে একের পর এক হামলা সয়েছি আমরা। শোক, যন্ত্রণা, আঘাত, ক্ষয়ক্ষতি আর সহ্য করা যাচ্ছে না। কহাঁতক আন্তর্জাতিক মহলের কাছে দরবার করা যায়, কহাঁতক সাহায্য় চাওয়া যায়!” (Congress News)
২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বই হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “সব প্রমাণ ছিল আমাদের কাছে। এক জঙ্গিকে জীবিতও ধরে ফেলি। আজমল কসাভকে ধরতে এক পুলিশকর্মী আত্মবলি দেন। ওর পরিচয়, বাড়ি, ঠিকানা, পাকিস্তানের গ্রামের নাম পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছিল। এমনকি পাকিস্তান থেকে হ্যান্ডলার প্রতি মিনিটে যে নির্দেশ দিচ্ছিল, তার রেকর্ডিং ছিল পশ্চিমি সংস্থাগুলির কাছেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হল? একজনকেও কি দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া গিয়েছে? পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত জোগানোর রাস্তাই বেছে নিয়েছে।”
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান বোঝাতে গিয়ে শশী বলেন, “সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। জঙ্গিরা বুঝতে পেরেছে যে, তাদের মূল্য চোকাতে হবে। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ থাকাও উচিত নয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উরি হামলার পর, প্রথমবার নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায় ভারত, যা আগে কখনও করিনি আমরা। কার্গিল যুদ্ধের সময়ও নিয়ন্ত্রণরেখা পার করিনি। উরির সময় করেছি, তার পর ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা। সেবার শুধু নিয়ন্ত্রণরেখা নয়, আন্তর্জাতিক সীমান্তও পেরিয়ে বালাকোটে জঙ্গিদের আঘাত করি। আর এবার একেবারে পাকিস্তানের বুকে আঘাত হেনেছি, ন’জায়গায় জঙ্গিঘাঁটি, প্রশিক্ষণ শিবির, জঙ্গিদের সদর দফতর গুঁড়িয়ে দিয়েছি।”
Operation Sindoor-এর প্রশংসায় শশীকে বলতে শোনা যায়, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। Operation Sindoor চালাতেই হতো। ২৬ মহিলার কপালের সিঁদুর মুছে দিয়েছিল, তাঁদের স্বামী ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। কেঁদেকেটে মহিলারা তাদেরও মেরে ফেলতে বলেছিলেন জঙ্গিদের। কিন্তু তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়, যাতে এসে কী ঘটেছে বলতে পারেন। আমরা ওঁদের কান্না শুনেছি। আর তাই আমাদের মেয়েদের মাথা সিঁদুরের লাল রংয়ের সঙ্গে হত্যাকারী, হামলাকারীদের রক্তের লাল রং মিলিয়ে দেওয়া সঙ্কল্প নিই।”
উরি হামলার পর প্রথম বার নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর যে দাবি করেছেন শশী, তাতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের প্রাক্তন সাংসদ উদয় রাজ বলেন, “কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর এখন বিজেপি-র সুপার-মুখপাত্রে পরিণত হয়েছেন। মোজিদির চামচাগিরিতে বিজেপি নেতাদেরও ছাপিয়ে যাচ্ছেন উনি। আগের সরকার কী করত, তা কি আদৌ জানেন উনি? এখন সেনার কাজের কৃতিত্বে ভাগ বসানো হচ্ছে। আগের সরকার এখনকার মতো ছিল না। এই সরকার কিছুই করে না, কিন্তু সবের কৃতিত্ব দাবি করে। শশী তারুর বিজেপি-র প্রচারের মুখ হয়ে উঠেছেন, তাদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন।” কংগ্রেস আগেই জানিয়েছিল, UPA আমলে ছ'বার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়েছিল। কিন্তু দেশের নিরাপত্তার জন্য স্পর্শকাতর বলেই, সেই তথ্য সামনে আনা হয়নি। বিজেপি-র মতো সনার কৃতিত্ব ভাঙিয়ে কংগ্রেস ভোট ঘরে তুলতে চায়নি বলেও জানানো হয় হাতশিবিরের তরফে। কিন্তু শশীর মন্তব্য কংগ্রেসের অবস্থানের সঙ্গে মিলছে না।
শশীর সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়ছে বলে দীর্ঘ সময় ধরেই জল্পনা চলছে লুটিয়েন্স দিল্লিতে। Operation Sindoor নিয়ে বিরোধী শিবিরের বাকি নেতারা সেনাবাহিনীর প্রশংসা করলেও, তারুর এককদম এগিয়ে মোদির প্রশংসা করেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "ভারত হামলার সঠিক জবাব দিয়েছে। জাতীয় সঙ্কটের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি একেবারে সঠিক পদক্ষেপ করেছেন।" তারুরে এই মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে শোরগোল পড়ে যায়। দলীয় বৈঠকে তাঁকে 'লক্ষ্মণরেখা'র কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর আসে। তিরুঅনন্তপুরমে একটি অনুষ্ঠানে মোদির সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিত তাঁর উপস্থিত থাকা, খোশগল্প করার বিষয়টিও দলীয় নেতৃত্ব ভালভাবে গ্রহণ করেনি। আর তার পরই Operation Sindoor নিয়ে যে সর্বদলীয় প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশ পাঠানোর জন্য শশীর নাম ঘোষণা করে কেন্দ্র। অথচ কংগ্রেসের তরফে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তাতে শশীর নামও ছিল না। সেই থেকেই দলের অন্দরে শশীকে নিয়ে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে, যা আরও বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।
পহেলগাঁও হামলার পরই তিরুঅনন্তপুরমে একটি অনুষ্ঠানে মোদির সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিত তাঁর উপস্থিত থাকা, খোশগল্প করার বিষয়টিও দলীয় নেতৃত্ব ভালভাবে গ্রহণ করেনি। আর তাই দলের অন্দরে তারুরকে নিয়ে ক্ষোভের সুর শোনা যাচ্ছে। সেই আবহে তারুরকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশে পাঠানোর মোদির সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।