নয়াদিল্লি: রাজনৈতিক ভাবে বিরোধী শিবিরে অবস্থান হলেও, কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরকে গুরুদায়িত্ব দিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের 'জিরো টলারেন্স' নীতি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পেলেন তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ তারুর। শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু এই ঘোষণা করেছেন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA শিবির থেকে চার এবং বিরোধী শিবির I.N.D.I.A থেকে তিন সাংসদের প্রতিনিধিদল গড়েছে কেন্দ্র। তবে সবক'টি নামের মধ্য়ে তারুরের নাম আলাদা করে নজর কেড়েছে সকলের। বেশ কিছু দিন ধরেই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সমীকরণ চর্চায় রয়েছে। (Shashi Tharoor)

শনিবার কেন্দ্রের তরফে এই ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'প্রয়োজনের মুহূর্তে ভার ঐক্যবদ্ধ। সাতজন সর্বদলীয় প্রতিনিধি শীঘ্রই সহযোগী দেশে পৌঁছবেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স বার্তা পৌঁছে দেবেন। রাজনীতি এবং মদভেদের ঊর্ধ্বে আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলনই ঘটেছে এই সিদ্ধান্তে'। (Operation Sindoor)

কেন্দ্রীয় সরকার যে সাত প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করেছে, সেই তালিকায় রয়েছেন, কংগ্রেসের তারুর, DMK নেত্রী কানিমোঝি করুণানিধি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে। এঁরা তিনজনই বিরোধীদের I.N.D.I.A শিবিরের অংশ। পাশাপাশি, বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ, বৈজয়ন্ত পান্ডা, সংযুক্ত জনতা দলের সঞ্জয়কুমার ঝা, শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে) সাংসদ শ্রীকান্ত শিন্ডে রয়েছেন প্রতিনিধি দলে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলিতে ভারতের হয়ে বার্তা নিয়ে যাবেন এই সাত প্রতিনিধি। আমেরিকা, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশে যাবেন তাঁরা। দেশের জাতীয় ঐক্য যেমন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরবেন তাঁরা, তেমনই সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা তুলে ধরবেন। পহেলগাঁও হামলার পরই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যাবতীয় পদক্ষেপে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিরোধীরা। Operation Sindoor নিয়েও সেনাবাহিনীকে একযোগে সমর্থন জানান সকলে। কিন্তু বাকি সকলের মধ্যে তারুরকে দেশের প্রতিনিধি করে পাঠানো নিয়ে আলাদা জল্পনা শুরু হয়েছে, যার নেপথ্যে রয়েছে তারুরের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য, মোদির সঙ্গে এক মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি এবং কংগ্রেসের অন্দরে তাঁকে নিয়ে জমা হওয়া অসন্তোষ। কংগ্রেস নেতা জরাম রমেশ জানিয়েছেন, ১৬ মে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে কথা হয়েছে রিজিজুর। রাহুলের কাছ থেকে তালিকা চান তিনি। রাহুল যে তালিকা দিয়েছিলেন, তাতে নাম ছিল প্রাক্তন মন্ত্রী আনন্দ শর্মা, দলের সাংসদ গৌরব গগৈ, সৈয়দ নাসের হুসেন এবং রাজা ব্রারের। কিন্তু রিজিজু যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে রাহুলের জমা দেওয়া একটি নামও নেই। বরং তারুর রয়েছেন। 

এদিন সরকারের তরফে তালিকা প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় তারুর লেখেন, 'ভারত সরকারের তরফে পাঁচ দেশের রাজধানীতে প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেওয়ার, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে দেশের অবস্থান জানানোর আমন্ত্রণ পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি। দেশের স্বার্থ জড়িয়ে যেখানে, যেখানে আমার সেবার প্রয়োজন পড়বে, সেখানে আমি পিছিয়ে থাকব না'।

Operation Sindoor নিয়ে গত কয়েকদিনে বার বার মুখ খুলেছেন তারুর। বিরোধী শিবিরের বাকি নেতারা সেনার প্রশংসা করলেও, তারুর এককদম এগিয়ে মোদির প্রশংসা করেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "ভারত হামলার সঠিক জবাব দিয়েছে। জাতীয় সঙ্কটের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি একেবারে সঠিক পদক্ষেপ করেছেন।" তারুরে এই মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে শোরগোল পড়ে যায়। দলীয় বৈঠকে তাঁকে 'লক্ষ্মণরেখা'র কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় বলে খবর আসে। তারুর যদিও জানান, তিনি নিজের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেছেন। তবে পহেলগাঁও হামলার পরই  তিরুঅনন্তপুরমে একটি অনুষ্ঠানে মোদির সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিত তাঁর উপস্থিত থাকা, খোশগল্প করার বিষয়টিও দলীয় নেতৃত্ব ভালভাবে গ্রহণ করেনি। আর তাই দলের অন্দরে তারুরকে নিয়ে ক্ষোভের সুর শোনা যাচ্ছে। সেই আবহে তারুরকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশে পাঠানোর মোদির সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।

তারুরকে নিয়ে কংগ্রেসে এই দোলাচল যদিও নতুন নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ার পর, নেতৃত্বের সমালোচনা করে যে ২৩ জন নেতা চিঠি দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধীকে, সেই তালিকায় নাম ছিল তাঁর। কেরলে পিনারাই বিজয়ন নেতৃত্বাধীন LDF সরকারেরও প্রশংসা শোনা যায় তাঁর মুখে। এমনকি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের সময় মল্লিকার্জুন খড়গের বিরুদ্ধে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়েও কম আলোচনা হয়নি। তিনি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে বার বার। সেই গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেও, ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শোনা গিয়েছিল তারুরের মুখে। তাঁর বক্তব্য ছিল, "আমি সবসময় দলের সঙ্গে আছি। দল ব্যবহার করতে চাইলে ভাল। না চাইলে, আমার নিজের কাজ আছে। আমার অন্য উপায় নেই ভাবলে ভুল হবে।"