নয়াদিল্লি: অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল লোকসভায়। ক্ষুরধার বক্তৃতা শেষ করেছেন সবে। আর তার পরই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি (Smriti Irani)। লোকসভায় (Lok Sabha) রাহুল বিজেপি-র মহিলা সাংসদদের দেখে 'ফ্লাইং কিস' ছুড়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্মৃতি। রাহুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে অভিযোগপত্রও জমা দিয়েছেন বিজেপি-র (BJP) ২২ জন মহিলা সাংসদ। মণিপুর থেকে নজর ঘোরাতেই এই মিথ্যাচার বলে পাল্টা সুর চড়িয়েছে কংগ্রেসও (Congress)। 


বুধবার লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় দিনে মণিপুর হিংসা নিয়ে সুর চড়ান রাহুল। মণিপুরের চরম নৃশংসতার কথা তুলে ধরছিলেন রাহুল। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা এবং তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিলেন একের পর এক। বিজেপি-র মেরুকরণের রাজনীতির দরুণ মণিপুরের মাটিতে ভারতমাতার হত্যা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাহুল। (No Confidence Motion)


রাহুলের সেই বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরই তাঁর বিরুদ্ধে লোকসভায় 'ফ্লাইং কিস' ছোড়ার অভিযোগ তোলেন স্মৃতি। রাহুলের বিরুদ্ধে 'ফ্লাইং কিস' ছোড়ার অভিযোগ তুলে প্রথম ট্যুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেন বিজেরপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। রাহুল সংসদে অভব্য আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।


এর পরই সংসদে সরব হন স্মৃতি। স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, "একটি বিষয়ে আমি আপত্তি জানাচ্ছি। যাঁকে আজ আমার আগে বক্তৃতা করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তিনি যাওয়ার সময় অভদ্র আচরণ করে গেলেন। একজন নারী বিদ্বেষী ব্যক্তির পক্ষেই এমনটা সম্ভব, যিনি সংসদের মহিলাদের লক্ষ্য করে ফ্লাইং কিস ছুড়তে পারেন। এমন আচরণ সংসদে কেউ কখনও দেখেননি।" বিজেপি-র সাংসদ হেমা মালিনী যদিও জানান, রাহুলকে এমন কোনও আচরণ করতে দেখেননি তিনি। তবে অভিযোগপত্রে সই রয়েছে তাঁরও।



আরও পড়ুন: Amit Shah : '১৩ বার রাজনীতিতে নামানো হয়েছে, ১৩ বারই ব্যর্থ হয়েছেন', কলাবতীর প্রসঙ্গ টেনে রাহুলকে নিশানা শাহের


যে ছবি এবং ভিডিও-কে হাতিয়ার করে বিজেপি রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন, অনেক দূর থেকে তোলা। তা দেখে রাহুল হাত নেড়ে কথা বলছেন বলে মনে হয়েছে বলে দাবি তাঁর অনুগামীদের। কংগ্রেস ওই ভিডিও এবং ছবিকে সামনে রেখেই তাই অভিযোগের মোকাবিলা করতে নেমে পড়ে। দলের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, "রাহুল গাঁধীকে ফ্লাইং কিস ছুড়তে কোথায় দেখা যাচ্ছে? কিসের ভিত্তিতে বিজেপি এই মিথ্যা অভিযোগ করছে? রাহুলের গায়ে কালি ছেটাতেই বিজেপি-র এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার।"


গোটা ঘটনায় স্মৃতিকে বেঁধেন কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাথ। তাঁর বক্তব্য, "স্মৃতি ইরানি ভুলে যান যে এটা টেলিভিশন চ্যানেল নয়। এটা ভারতের সংসদ। নাটকের আখড়া নয় কোনও। আপনার বেকার অভিনয় এবং মিথ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করার এই অভ্যাস বন্ধ করুন। কথা হচ্ছে মণিপুর নিয়ে। কিন্তু সবসময় ইস্যু থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা বন্ধ করুন এবার। দম থাকলে মণিপুর নিয়ে কথা বলুন।"


গোটা ঘটনায় রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলও। দলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষও কটাক্ষ করেন স্মৃতিকে। তিনি বলেন, "ক্য়ামেরা দেখলেই স্মৃতি ইরানির মনে পড়ে যায় যে উনি সাস ভি কভি বহু থির অভিনেত্রী। তাই চড়া মাত্রায় যাত্রা করে ফেলেন। এটা এবার বন্ধ করুন উনি।"


তবে বুধবার সেখানেই তরজা শেষ হয়নি। সংসদে রাহুল বক্তৃতা করার সময়, ইচ্ছাকৃত ভাবে সংসদ টিভির ক্যামেরা বার বার অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ সামনে এসেছে। রাহুলের বক্তৃতা চলাকালীনই বিষয়টি নিয়ে সরব হয় কংগ্রেস। মণিপুর নিয়ে রাহুলের প্রতিবাদ দেশবাসীকে না দেখতে দেওয়ার জন্যই এমন আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই নিয়ে কংগ্রেস লেখে, 'স্বৈরাচারীরা কত ভীতু দেখুন। রাহুল গাঁধী মণিপুর নিয়ে ১৫ মিনিট ৪২ সেকেন্ড কথা বলেছেন। এর মধ্যে সংসদ টিভিতে ১১ মিনিট ৮ সেকেন্ড শুধুমাত্র স্পিকার ওম বিড়লাকেই দেখানো হয়েছে। রাহুলজিকে দেখানো হয়েছে মোটে চার মিনিট। অথচ রাহুলের পর যখন স্মৃতি ইরানি ৫৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ড ধরে বক্তৃতা করেন, সংসদ টিভিতে ৫০ মিনিট ৮ সেকেন্ড ধরে শুধু তাঁকেই দেখানো হয়'।

লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "রাহুল গাঁধীকে দেখাচ্ছে না, কংগ্রেসকে দেখাচ্ছে না, আমাদের প্রতিবাদ দেখাচ্ছে না, আমরা যা বলছি, দেখাচ্ছে না। সংসদের মধ্যে যা ইচ্ছে তাই চলছে। আগামী দিন সংসদই তুলে দেবেন।" এই অভিযোগ যদিও নতুন নয়। সংসদ টিভিতে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিরোধীদের দেখানো হয় না, যাতে বিরোধী নেতাদের দেখা না যায়, তার জন্য় কায়দা করে ক্যামেরা অন্য দিকে বসানো হয়েছে বলে আগেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বিরোধী শিবিরের সাংসদরা সরকারের সমালোচনা করলে তাঁদের মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও সামনে আসে।