কলকাতা: হাজারো প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পুজো করার অধিকার অর্জন করেছে সোনাগাছি। তাই সেই অধিকার থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখার কোনও প্রশ্নই নই। অতীতে লড়তে হয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে, এবার ওরা লড়ছে করোনার সঙ্গে। কোর্টরুম থেকে অধিকার অর্জন করে আনার অভিজ্ঞতা ওদের আছে। মানসিক দৃঢ়তা এবং পুজো করার নাছোড়বান্দা মনোভাবেই এসেছিল আইনি জয়। তারপর রীতিমতো মণ্ডপ বানিয়ে জমকালো আলোকসজ্জায় দুর্গাপুজো করেছেন দুর্বারের মেয়েরা। এবার পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন। তবে পুজো হবে।
ব্যবসা নেই। কর্মহারা হাজার হাজার মেয়ে। তার ওপর সংক্রমণের ভয়। এই অবস্থায় দুর্গা পুজো? দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি প্রথমে ঠিক করেছিল, এবার পুজো বন্ধ রাখবে। তবে সেই অবস্থান বদলে পুজো চালিয়ে যাওয়ার পথেই হাঁটল তারা।
উত্তর কলকাতার সোনাগাছি। এশিয়ার বৃহত্তম এই যৌনপল্লীতে একটা সময় প্রায় ৭০০০ কর্মী কাজ করতেন। দিনে অন্তত ২০ হাজার খদ্দের আসতেন সেখানে। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সেই সোনাগাছিই এখন কার্যত শ্মশান। ব্যবসা তো নেই, পারলে নিজেদের পেশা পরিবর্তন করতে পারলে বাঁচেন তাঁরা। জেলা থেকে যৌনকর্মীদের আনাগোনাও নেই। এই পরিস্থিতিতে দুর্বার দুর্গাপুজো করবে।
বিগত বছরগুলোতে সোনাগাছির মেয়েরাই ১০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে ফান্ড তৈরি করতেন। সেই টাকায় হত পুজোর ভোগ। অনেক হিন্দু বাড়ি থেকেও ফল সহ পুজোর আরও সামগ্রী আসত। প্রতিমা আনা হত কুমোরটুলি থেকে।
করোনাকালে আগের মতো সবকিছু হয়ত করা সম্ভব হবে না, তবে পুজো হবে। দুর্বার ঠিক করেছে এবার এক পয়সাও চাঁদা তোলা হবে না। প্রতিমার জন্য একটি সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সেই সংস্থা প্রতিমা দিতে রাজি হলে চিন্ময়ী মূর্তিতে পুজো হবে। আর সেটা না হলে ঘটেই দুর্গা পুজো করবে দুর্বার।
যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করছেন এবং দুর্বারের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত সমাজকর্মী মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় এবিপি আনন্দকে জানিয়েছেন, “ওই সময়টা সব মেয়েই চায় মায়ের পুজোতে থাকতে। তবে এবার যা অবস্থা, তাতে সবাইকে আসতে দেওয়া যাবে না। প্রথমে তো ভেবেছিলাম পুজো বন্ধ রাখব। তবে একটা মিটিং করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুজো করব। একটি ইভেন্ট প্ল্যানার কোম্পানির সঙ্গে কথা চলছে। ওরা ঠাকুর দিলে প্রতিমায় পুজো হবে। ১৫ দিনে জানাবে বলেছে। সেটা না হলে ঘটপুজো হবে।”
তিনি আরও বলেন, এবার কোনও চাঁদা তোলার ব্যাপার থাকছে না। পুজোর সমস্ত খরচ বহন করবে দুর্বার। দুর্গাপুজো উদ্যোক্তাদের ফোরাম যে গাইডলাইন দিয়েছে তা মেনেই হবে পুজো। ২৫ থেকে ৩০ জনের বেশি মানুষকে কোনওভাবেই জড়ো হতে দেওয়া যাবে না। প্রশাসনিক সহায়তা নিয়েই পুজো করার কথা জানিয়েছেন মহাশ্বেতা।