নয়াদিল্লি: ঘটা করে বিদেশ থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল। ভারতে চিতার প্রত্যাবর্তন ঘটল বলে প্রচার হয়েছিল বিস্তর। কিন্তু তার পর থেকে একের পর এক ন'টি চিতার মৃত্যু হয়েছে। সেই নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। এবার আদালতেও সরকারের দিকে আঙুল উঠল। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চিঠি এল সুপ্রিম কোর্টে। মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে অভিজ্ঞ পশু বিশেষজ্ঞ নেই, তাঁদের মতামতকেও ধর্তব্যের মধ্যে আনা হচ্ছে না বলে জানালেন সে দেশের বিশেষজ্ঞরা। 


বুধবার কুনো ন্যাশনাল পার্কে আরও একটি স্ত্রী চিতার মৃত্যু হয়। যে চিতাটি মারা গিয়েছে, তার নাম ছিল ধাত্রী। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে নমিবিয়ায় জন্ম হয় তার। ওই স্ত্রী চিতার বয়স হয়েছিল মাত্র সাড়ে তিন বছর। কুনো ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ধাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃত্যুর কারণ যদিও এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত চলছে বলে জানানো হয়েছে। তাতে আরও একবার সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 


সেই আবহেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সুপ্রিম কোর্টে দু'টি পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে সে দেশের পশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কুনো ন্যাশনাল পার্কে চরম অব্যবস্থা রয়েছে। ভারত সরকারের তরফে চিতার দেখভালের যে কমিটি গড়া হচ্ছে, সেখানেও নিজেদের মতামত তুলে ধরেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তা কোনও বারই ধর্তব্যের মধ্যে আনা হচ্ছে না। শুধুমাত্র নামসর্বস্ব বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাজিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে তাঁদের।


দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অফ প্রেটোরিয়ার পশু এবং বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক এড্রিয়ান টরডিফে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠি পাঠিয়েছেন নমিবিয়ারপ চিতা কনজার্ভেশন ফান্ডের ডিরেক্টর এল মার্কও। এ ছাড়াও ইমেল মারফত সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটিকে চিঠি দিয়েছেন বিদেশি পশু বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট ভ্যান ডি মারভে এবং অ্যান্ডি ফ্রেজার।


সব চিঠির মন্তব্যই মোটামুটি এক। তাতে বলা হয়েছে, কুনো ন্য়াশনাল পার্কে এই মুহূর্তে চিতার দেখভাল করছেন যাঁরা, বিজ্ঞানসম্মত কোনও প্রশিক্ষণই নেই তাঁদের। এই প্রকল্প চালানোরক মতো অভিজ্ঞ নন তাঁরা। ওয়াই ভি জালা প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর পর থেকে, তাঁদের পরামর্শও কানে তোলা হচ্ছে না, আনা হচ্ছে না ধর্তব্যের মধ্যেই। এর মধ্যে দুই বিশেষজ্ঞ যদিও জানিয়েছেন, চিঠি পাঠানো নিয়ে তাঁদের সম্মতি আদায় করা হয়নি। চিঠি তুলে নেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তাঁরা। 


কিন্তু বিষয়টি সামনে আসতেই ফের চিতা প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কারণ ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কুনোয় কী ঘটছে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানানোই হয়নি বিশেষজ্ঞদের। সংবাদমাধ্যম থেকে চিতামূত্যুর খবর জানতে পারেন তাঁরা। এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক চিতা সংরক্ষণের জন্যও অত্যন্ত বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে।


সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো চিঠিতে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা হল, অবিলম্বে কুনো ন্যাশনাল পার্কে চিতাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হোক বিশেষজ্ঞদের। প্রত্যেক মুহূর্তের রেকর্ড রাখা হোক, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ীই দেখভাল করা হোক চিতাগুলির। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখা হোক চিতাগুলিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে, এতগুলি চিতার মৃত্যু হতো না বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।