এক জন মহিলার ছবি ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করেছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, প্রতারণা।


সেই সব ভুয়ো প্রোফাইল মারফত বন্ধুত্ব পাতিয়ে, বিশ্বাস অর্জন করে ফেসবুকের বন্ধুদের দিয়ে নিজের মোবাইলে টাকা ভরাতেন তিনি। তাতেও মন ভরেনি। একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখানে টাকা স্থানান্তরিত করার জন্য অনুরোধও করতে শুরু করেন। অবশেষে পুলিশের জালে পড়লেন তিনি।

যে মহিলার ছবি তিনি ব্যবহার করে কখনও রিয়া মুখোপাধ্যায়, কখনও রিমঝিম করণ নামের ভুয়ো প্রোফাইল খুলেছিলেন। বন্ধু মারফত সেই মহিলা এক দিন জানতে পারেন সে কথা। ২০১৩ সালে বৌবাজারের বাসিন্দা ওই মহিলা লালবাজারের সাইবার ক্রাইম শাখায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার পর থেকে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছিল প্রতারককে। হুগলির নালিকুলের বাসিন্দা, অভিযুক্ত ওই যুবক রাহুলদেব করণকে বুধবার রাতে কসবার বন্ধুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেয়ে রাহুলের তৈরি করা ফেসবুকের ভুয়ো প্রোফাইল-এ নজর রাখতে শুরু করেন তাঁরা। সেখান থেকেই এমন এক জন ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, যিনি রাহুলের অনুরোধে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা পাঠিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে ওই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ। সেই অ্যাকাউন্টের হদিস করতে গিয়ে পুলিশ খুঁজে পায় সুস্মিতা সাউ নামে এক মহিলাকে। জানা গিয়েছে, তিনিও হুগলির নালিকুলের বাসিন্দা। প্রায় এক মাস আগে সুস্মিতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে জেরা করেই উঠে আসে রাহুলের নাম।

পুলিশের জেরার মুখে সুস্মিতা জানান, তিনি রাহুলের বন্ধু। রাহুলের কথামতো তিনি অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন। সেই অ্যাকাউন্টে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন অঙ্কের টাকা ঢোকে। তবে কোনওটাই দু’হাজার টাকার বেশি নয়। এ ভাবে বহু বার সেই অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। পুলিশের দাবি, তবে কেন তিনি রাহুলকে বারবার নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন, কেনই বা সেই অ্যাকাউন্টের এটিএম কার্ড রাহুলকে দিয়েছিলেন, তা জেরায় পরিষ্কার করে বলেননি সুস্মিতা।

সুস্মিতার কাছ থেকে রাহুলের হদিস পেয়েও তাঁকে ধরতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। পুলিশ জানিয়েছে, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ২৩ বছরের রাহুল পুলিশি অভিযানের আঁচ পেয়ে যান। তিনি পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। পুলিশ রাহুলের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে। সেই মোবাইল নম্বরের উপরে শুরু হয় নজরদারি। শেষে জানা যায়, কসবার বন্ধুর বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন রাহুল। তাঁর কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল, দু’টি সিমকার্ড এবং প্রচুর ভুয়ো পরিচয়পত্র উদ্ধার হয়েছে। যার মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের ভুয়ো পরিচয়পত্রও ছিল। বৃহস্পতিবার রাহুলকে আদালতে তোলা হলে ১৯ অগস্ট পর্যন্ত
তাঁকে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

পুলিশ জানিয়েছে, মাস খানেক আগেই পুলিশি অভিযানের সময়ে নিজের তৈরি করা ভুয়ো প্রোফাইল ব্যবহার করা বন্ধ করে দেন রাহুল।