কলকাতা: বুধবার সন্ধেয় নন্দীগ্রামে আহত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতেই ভর্তি করা হয় এসেসকেএম হাসপাতালে। একশো কুড়ি কিলোমিটার গ্রিন করিডোর করে এসএসকেএমে আনা হয় মুখ্যমন্ত্রীকে।
গতকাল নেত্রী বলেছিলেন, ভিড়ের মধ্যে ৪-৫ জন বাইরে থেকে ঢুকে পড়েছিল। ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আমাকে। ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা মারা হয়। এর পিছনে ষড়যন্ত্র ছিল।
আজ, বৃহস্পতিবার, এসএসকেএমের উডবার্ন ব্লক থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, গতকাল আমি গাড়ির বনেটের ওপর দাঁড়িয়ে নমস্কার করছিলাম। তখন এত জোরে চাপ আসে যে পুরো গাড়িটা চেপে যায় আমার পায়ের ওপর।
গতকাল নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনার পর আজ নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তৃণমূল অভিযোগ করে, তৃণমূলনেত্রীর প্রাণনাশের গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। পাল্টা বিজেপি বলছে, নাটক করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আঘাতের কারণ ঘিরেই তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে জোর চাপানউতোর। বিজেপির প্রশ্ন, জেড প্লাস নিরাপত্তা বলয় থাকা সত্বেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটতে পারে? পাল্টা কমিশনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দিতে না পারার অভিযোগে সরব তৃণমূল।
আপাতত হাসপাতালে ভর্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত শনি ও রবিবারের জেলা সফরের কর্মসূচি আপাতত বাতিল করা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তৃণমূলনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁকে হয়তো হুইলচেয়ারে প্রচার করতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে একটি স্ন্যাপ পোল বা চটজলদি সমীক্ষা করেছে সি ভোটার। মানুষের সামনে তিনটি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। ১৪৯৩ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, জনতা তাঁদের মতামতে কী জানিয়েছেন---
প্রথম প্রশ্ন ছিল--
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, নন্দীগ্রামে চক্রান্ত করে তাঁর ওপর হামলা হয়েছে। বিরোধীদের পাল্টা দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। কার দাবি সত্যি বলে মনে করেন?
সি ভোটার জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছে, মমতার দাবিকে সত্যি বলে মেনে নিয়েছেন ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে, বিরোধীদের দাবিকে মান্যতা দিয়েছেন ৩৯%। বলতে পারব না জানিয়েছেন ১৭% মানুষ।
দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল--
বিজেপি দাবি করছে, সিবিআই তদন্ত করে দেখুক, নন্দীগ্রামে আসলে কী হয়েছে। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি কি আপনি সমর্থন করেন?
সি ভোটার জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করার দাবির স্বপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন ৪৯% মানুষ। বিপক্ষে মত দিয়েছেন ২৯% মানুষ। বলতে পারব না জানিয়েছেন - ২২%।
তৃতীয় প্রশ্ন ছিল --
নন্দীগ্রামের ঘটনায় বিধানসভা ভোটে কে লাভবান হবে?
সি ভোটার জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছে, অধিকাংশ মানুষ মনে করছেন এতে লাভ তৃণমূলের। ৪৪ শতাংশ মানুষ শাসক দলের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ৩৪% মানুষ মনে করেন, বিজেপি এই ঘটনা থেকে লাভবান হবে। অন্যদিকে, ১২% মানুষ মনে করেন, এর থেকে লাভবান হবে বাম+কংগ্রেস+আইএসএফ-এর জোট সংযুক্ত মোর্চা। বলতে পারব না জানিয়েছেন - ১০%।
এই সমীক্ষা প্রসঙ্গে অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, এটা নির্মাণ-বিনির্মাণ হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ভোটারের কাছে কী বার্তা যায়, তা গুরুত্বপূর্ণ। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল সেই শতাংশের মানুষ, যাঁরা উত্তর দিতে চাননি। ফলে, তাঁদের জবাবে এলে, অনেক হিসেব-নিকেশ উল্টে যেতে পারে।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, সিবিআই তদন্ত করলেই যে সঠিক তথ্য বেরোবে, এই ধারণাটা ভুল। কারণ, বহু মানুষের কাছে সিবিআই সম্পর্কে ধারণাটা অন্যরকম।
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের প্রশ্ন, আজ যদি মুখ্যমন্ত্রীর ওপর জঙ্গি হামলা হয়, তাহলে কারা লাভবান হবে? তিনি বলেন, হতেই পারে, তৃণমূলের মধ্য থেকেই কেউ চাইছেন, যাতে এমন কিছু ঘটুক, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতে যান।