আশাবুল হোসেন, দীপক ঘোষ ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: হাসপাতালে ভর্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনি ও রবিবারের জেলা সফরের কর্মসূচি আপাতত বাতিল করা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। 


এর আগে, এদিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, আঘাত পেলেও অপরিবর্তিত থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি। সব ঠিক থাকলে শনিবার থেকেই প্রচারে ময়দানে দেখা যাবে তৃণমূলনেত্রীকে।  দলনেত্রীর কর্মসূচিতে কোনও বদল করা হয়নি বলেই জানান দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।  কিন্তু, পরে, তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, আপাতত দুদিনের কর্মসূচি বাতিল করা হচ্ছে।


জানা গিয়েছে, ১৩ মার্চ পুরুলিয়ায় সভা ছিল মমতার। ১৪ মার্চ বাঁকুড়ায় যাওয়ার কথা ছিল তৃণমূল নেত্রীর। ১৬ মার্চ তৃণমূল নেত্রীর পশ্চিম মেদিনীপুরে সভা। এরপর, ১৭ মার্চ পূর্ব মেদিনীপুরে সভা তৃণমূল নেত্রীর। 


২৫ মার্চ প্রথম দফার ভোটপ্রচারের শেষদিন। প্রথম দফার আগে প্রচারে হাতে সময় ২ সপ্তাহ। কমপক্ষে ১৪টি সভা করার কথা তৃণমূল নেত্রীর। 


ইতিমধ্যেই, এসএসকেএম থেকে ভিডিও বার্তায় তৃণমূলনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁকে হয়তো হুইলচেয়ারে প্রচার করতে হবে। 


নন্দীগ্রামে ভোট দ্বিতীয় দফায় অর্থাৎ ১ এপ্রিল। অর্থাৎ বাকি আর কুড়ি দিন। শনিবার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ব নির্ধারিত ঠাসা প্রচার কর্মসূচি ছিল। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুরে । অন্তত ১৪টি জনসভা করার কথা ছিল তাঁর। 


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটপ্রচার মানেই দীর্ঘ পদযাত্রা। সভামঞ্চের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে বক্তৃতা। কিন্তু, বুধবার নন্দীগ্রামের দুর্ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে আঘাত লেগেছে। বৃহস্পতিবার এসএসকেএম থেকে দেওয়া ভিডিও-বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রয়োজনে হুইল চেয়ারে করে প্রচার সারবেন তিনি। 


 



 


হাসপাতাল থেকে এক ভিডিওবার্তায় তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, আমার মিটিং আমি কিছুই নষ্ট করব না। কিন্তু হয়তো কিছুদিন আমাকে হুইল চেয়ারে ঘুরতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি ২-৩ দিনের মধ্যে নিজের ফিল্ডে ফিরতে পারব। তবে হয়ত পায়ের প্রবলেম থাকবে, কিন্তু আমি ম্যানেজ করে নেব। আমার মিটিং আমি কিছুই নষ্ট করব না। কিন্তু হয়তো কিছুদিন আমাকে হুইল চেয়ারে ঘুরতে হবে। আপনাদের সহযোগিতা চাইব।


যদিও, চিকিৎসকদের পরামর্শ, এখন কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়া উচিত মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁদের মতে, যে অংশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত, সেগুলি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে, প্লাস্টার হয়ে থাকলে রক্ত চলাচল ইত্যাদি স্বাভাবিক হতে সময় নয়, সেই সময় পা ঝোলানো অবস্থায় হুইল চেয়ারে করে ঘোরাটা ঠিক নয়, তাতে আঘাতের জায়গা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শে ভারসাম্য রাখলে সামাল দেওয়া সম্ভব।


এদিকে নন্দীগ্রামের দুর্ঘটনার পরই বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল, তৃণমূলনেত্রী সহানুভূতি কুড়নোর চেষ্টা করছেন। হুইলচেয়ারে প্রচারও সেই চেষ্টার একটা অংশ বলেই কটাক্ষ করেছে সিপিএম। সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, সেন্টিমেন্ট কুড়নোর চেষ্টা। দশ বছরে এটাই করেছেন। এতে লাভ হবে না।


নন্দীগ্রামে এবার হাইভোল্টেজ ত্রিমুখী লড়াই। একদিকে তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। একদিকে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়। 


 



২০১১ সালে এরাজ্যের বিধানসভা ভোটে অন্যতম ইস্যু ছিল নন্দীগ্রাম। একদশক পর বিধানসভা ভোটের মুখে আবারও নন্দীগ্রামের ঘটনা ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।