পার্থপ্রতিম ঘোষ, কার্শিয়ং: আফগানিস্তান থেকে দেশে ফিরলেন কার্শিয়ঙের বাসিন্দা কিষাণ গুরুঙ্গ। রবিবার রাতে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামেন তিনি। কাবুলে ইতালিয়ান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন এই প্রাক্তন সেনাকর্মী। তিনি ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। বাড়ি ফিরে এবিপি আনন্দের মুখোমুখি কিষাণ। জানালেন, ১৫ অগাস্ট তাঁরা দূতাবাসে থাকাকালীনই জানতে পারেন, তালিবানরা এগিয়ে আসছে। সন্ধে নাগাদ জানতে পারেন, কাবুলে ঢুকে পড়েছে তালিবান। কিন্তু অফিস ছাড়ার উপায় ছিল না। তাঁদের বলা হয়, সন্ধে অবধি ডিউটি করতেই হবে। তালিবান হানা থেকে ইতালির দূতাবাসকে বাঁচাতে অস্ত্র হাতে বাড়িটিকে ঘিরে ফেলেন তাঁরা। এরপর একে একে দূতাবার থেকে বেরিয়ে যান কর্মীরা।



বিপদে পড়ে যান তাঁরাই। কীভাবে বের হবেন, কোথায় যাবেন, বুঝতে পারেননি। তখন কেউ তাঁদের পরামর্শ দেন ডেনমার্ক দূতাবাসে যেতে। কিন্তু যাবেন কীভাবে, গাড়ি নেই। চারিদিকে ছড়িয়ে একে৪৭। নেই পুলিশ। পড়ে আছে ফাঁকা ভ্যান। এরপর কোমনওক্রমে একটি গাড়িতে উঠে পড়েন তাঁরা। দেখেন চারিদিকে চলছে গুলি। আতঙ্ক ঘিরে ধরছিল ক্রমশ। তারই মধ্যে দিয়ে পৌঁছন ডেনমার্কের দূতাবাসে। সেখান থেকে একটি হোটেলে জায়গা হয় তাঁদের। ঘর পাননি। রাত কাটে জঞ্জালের ব্যাগে। দেখেন এলোপাথারি চলছে গুলি।  লুটিয়ে পড়ছে মানুষ। চাবুক হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে তালিবান। ওই হোটেলে থাকাকালীনই দেখেন একসঙ্গে ১২ টি মৃতদেহ ঢুকছে হোটেলে। তবে তাঁর ধারণা, প্রতিটি দেহই আফগান নাগরিকদের। 

এরপর ব্রিটিশ সেনার সহায়তায় পৌঁছে যান কাবুল বিমানবন্দরে। সেখান খোলা মাঠেই কাটাতে হয় রাত। প্রতি মুহূর্ত কাটে আতঙ্কে। কিষাণ গুরুঙ্গ জানান, মাঝে একবার তালিবান তাঁদের পথ আটকায়। জানতে চায় পরিচয়। আতঙ্কে প্রাণ তখন ওষ্ঠাগত। ভুলেই গিয়েছিলেন ভারতীয় কথাটা বলতে। আর একটু হলেই পিঠে পড়ত তালিবানি চাবুক। এয়ারপোর্টের পথে তখন প্রচণ্ড যানজট, ভিড়, তালিবান শাসন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বের হতে চাওয়া মানুষের ভিড়। জট কাটাতে এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছিল তালিবানরা। 

তারপর বিমানবন্দরে দুই রাত কাটিয়ে সেখান থেকে দেশে ফেরা তাজিকিস্তান হয়ে।