আলিপুরদুয়ার: ভূটান সীমান্ত লাগোয়া আলিপুরদুয়ার জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পাহাড়ে ঘেরা একটি ছোট্ট জনপদ -- আদমা। জনসংখ্যা ২০০। 


অথচ, রাজ্যের যে কোনও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই গ্রামের বাসিন্দারা। কারণ, এই গ্রামে প্রবেশ করা বা বেরনোর কোনও রাস্তা নেই। পাহাড় ডিঙিয়ে, জঙ্গল পার করে প্রায় ৬ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে তবে সড়কের দেখা মিলবে। সেটাই বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্রের একমাত্র পথ। 


কিন্তু, আদমার মানুষ যাতে ভ্যাকসিনের ডোজ পান, তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা।


যেমন ভাবা তেমন কাজ। শনিবার, মীনার নেতৃত্বে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট স্বাস্থ্য ও অন্যান্য আধিকারিক ঘন জঙ্গল ও পাহাড় টপকে প্রায় ২০ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছন সেখানে। ১০০ জন গ্রামবাসীকে টিকা দেন। 


মীনা বলেন, গাড়ি যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। পাঁচটা পাহাড় টপকে গ্রামে পৌঁছতে হয়েছিল। তবে, আমি খুশি যে সব যোগ্য মানুষকে ভ্যাকসিনের ডোজ দিতে পেরছি। আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। 


জেলাশাসক জানান, তাঁরা ভোরের আলো ফোটার আগেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রথমে সড়কপথে জেলা সদর থেকে ৪৫ কিমি দূরে রৈমাতাং পৌঁছন। সেখান থেকে ৯ কিমি চড়াই ট্রেকিং করে আদমায় পৌঁছন। 


আদমায় মূলত দুকপা জনগোষ্ঠীর মানুষজনের বসবাস। মীনা জানান, ভ্যাকসিনের ঠান্ডা বাক্স কাঁধে নিয়ে প্রায় পাঁচটি পাহাড় ডিঙোতে হয়েছে গোটা টিমকে। 


তিনি বলেন, ওই প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের এখানে আসা কার্যত অসম্ভব। তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের সেখানে যেতে হয়। জেলাশাসকের সঙ্গে ছিলেন কালচিনি বিডিও প্রশান্ত কুমার বর্মণ। তিনি জানান, বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের একেবারে কোর এরিয়ার মধ্যে দিয়ে তাঁদের যেতে হয়েছিল। 


জেলাশাসক বলেন, ৪৫ বছর ও তার ঊর্ধ্ব প্রায় ১০০ জনের টিকাকরণ সম্পন্ন হয়। গ্রামবাসীদের মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজারও বণ্টন করা হয়। 


সব কাজ শেষ করে, আবার গোটা দল প্রায় চার ঘণ্টা হেঁটে রৈমাতাং পৌঁছন। সেখান থেকে গাড়ি করে ফেরেন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ।