রানা দাস, কাটোয়া: ধান বিক্রিতে কেন্দ্র করে কাটোয়া ও কালনা মহকুমায় ৬টি কৃষি সমবায়ের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকার নয়ছয়ের অভিযোগ। আর্থিক দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছে জেলা সমবায় দফতর। অভিযোগ, কৃষি সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান না কিনে, সমিতির নামে ভুয়ো চালান তৈরি করে রাইস মিলের সঙ্গে যোগসাজশে লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তদন্তে নেমে শোকজ করা হয়েছে ৬ সমবায় সমিতির সম্পাদককে। এনিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির অভিযোগ, সমবায় সমিতিগুলির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তৃণমূল নেতারা। ফলে এই আর্থিক দুর্নীতির দায় শাসকদলের। দুর্নীতি-যোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
ধান বিক্রিতে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে কাটোয়ার সহকারী রেজিস্ট্রার বিমল কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, ছয়টি সমবায় সমিতির সম্পাদককে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের কথা স্বীকার করেছেন সুদপুর কৃষি সমবায় সমিতির সম্পাদক। তিনি বলেন রাজনৈতিক চাপে নিতে বাধ্য হয়েছি, রাইস মিল আমাদের কাছে ফাঁকা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। নয়ছয় যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে রাইস মিলের মালিক করেছে ওই ফাঁসবে। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছি। রাইস মিল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে দুর্নীতি বলতে নারাজ। এদিকে সংশ্লিষ্ট কৃষি সমবায় সমিতিকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চলেছে জেলা প্রশাসন।
সরকারের নির্দেশে রাজ্য জুড়ে কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত দামে সরাসরি এলাকার কৃষকদের থেকে কৃষি সমবায় গুলি ধান কিনবে বলে ঠিক হয়। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে মরসুমে ১ হাজার ৮৬৮ টাকা কুইন্টাল দরে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে সমবায়ে আসে। অভাবি ধান ক্রয়ে সমবায় সমিতিগুলি সরকারে কাছ থেকে প্রতি কুইন্টালে ৩১ টাকা ২৫ পয়সা হিসেবে কমিশন পাবে। বর্ধমান রেঞ্জ ২ এর অধীনে ৭২টি কৃষি সমবায় সমিতি কৃষকদের কাছ থেকে শিবির করে অভাবি ধান কেনার অনুমতি পায়। এদের মধ্যে কাটোয়া মহকুমার চারটি সুদপুর কৃষি সমবায়, শ্রীখণ্ড কৃষি সমবায় ও ননগর কৃষি সমবায়, জামটপুর এবং পূর্বস্থালির দুটি সমবায়। মোট ৬টি কৃষি সমবায় সমিতি নিজেরা শিবির করে কৃষকদের কাছ থেকে অভাবি ধান না কিনে রাইস মিল মালিকদের কাছে ধান বিক্রি করতে কৃষকদের পাঠিয়েছিল বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, রাইস মিল মালিক সেই সুযোগে সমবায় সমিতির ভুয়ো চালানে কৃষকদের নাম বসিয়ে মজুত করা ধানকে অভাবি ধান দেখিয়ে নির্ধারিত কমিশনের টাকা আত্মসাৎ করেছে। জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালে অতিরিক্ত জেলা শাসক চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। জানা গিয়েছে, সমবায় সমিতির মহকুমা রেজিস্ট্রার অভিযুক্ত কৃষি সমবায়গুলিতে তদন্ত করে প্রচুর গড়মিল দেখতে পান। প্রথমত, কৃষকের নামহীন সমবায় সমিতির সম্পাদকের সাক্ষরিত চালানে এই অভাবি ধানের বেশি অংশ ক্রয় করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কৃষকদের মাস্টাররোল সমবায় সমিতির কাছে নেই। তৃতীয়ত, কৃষি সমবায় সমিতির এলাকার বাইরের কৃষকরা সমিতির চালানে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ধান বিক্রি করেছে। আইন বহির্ভূত কাজের জন্য এলাকার কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
সুদপুর কৃষি সমবায় সমিতির সম্পাদক পরেশনাথ ভট্টাচার্য বলেন, আমরা স্বচ্ছ কাজ করি, আমাদের অডিট হয়। রাইস মিল মালিকের কথায় আমি আমার সই করা কৃষকের নাম ছাড়া ফাঁকা বিক্রি চালান দিয়েছিলাম। এদিকে রাইস মিলের ম্যানেজার প্রকাশ আগরওয়াল বলেন, আমি যেখানে খুশি শিবির করে ধান কিনতে পারি। আমি কোনও টাকা নয়ছয় করিনি। তদন্তকারী সমবায় রেজিস্ট্রার বিমল কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, প্রচুর গড়মিল ধরা পড়েছে। কৃষি সমবায়গুলিকে শোকজ করেছি। দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা সমবায়গুলিকে কালো তালিকাভুক্ত করে সম্পাদকের বিরুদ্ধে এফআইআর করব।