কৌশিক গাঁতাইত, পশ্চিম বর্ধমান: করোনা মহামারীর দাপটে ছারখার দেশ-রাজ্য। হাসপাতালে বেড থেকে অক্সিজেন, সবকিছুর চাহিদা তুঙ্গে। এই অতিমারীর সময়ে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে মানুষই। আবার সেই মানুষই ফাঁদ পাতছে। আর সেই প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে মানুষ।
করোনার এই ভয়াবহ সঙ্কটকালে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির বাসিন্দা অঙ্কিতা সরকার। আর প্রতিদান হিসেবে পেলেন প্রতারণার ধাক্কা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে, ৫৮ হাজার টাকা খোয়াতে হল অঙ্কিতাকে।
হাসপাতালে অক্সিজেনের আকাল। অক্সিজেনের অভাবে রোগীমৃত্যুর মর্মান্তিক অভিযোগ উঠছে। এই পরিস্থিতিতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও কিট দিয়ে সাহায্য করার কথা ভেবেছিলেন আসানসোল পুরসভার অস্থায়ী কর্মী, এই তরুণী।
তাঁর দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখে, কলকাতার একটি সংস্থার কাছ থেকে ৫টি ১০লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ৫টি কিটের অর্ডার দেন। ১১ মে সংস্থার দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ডে ৫৮ হাজার টাকা পেমেন্ট করে দেন।
তরুণীর দাবি, তাঁকে জানানো হয়, সংস্থার অফিস দক্ষিণ ২৪ পরগনার কামালগাজিতে। বলা হয়, ৩ ঘণ্টার মধ্যে সিলিন্ডার পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট জায়গায়।
কিন্তু, তারপর ৩ ঘণ্টা কেন, ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পৌঁছয়নি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও কিট। অভিযোগ, যতবারই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, বলা হয়, সময় হলেই পৌঁছে যাবে।
এভাবেই দু’দিন কেটে যাওয়ার পরও, সিলিন্ডার কিংবা কিট, কিছুই না আসায়, অবশেষে কুলটি থানা ও আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেন অঙ্কিতা।
পুলিশ সূত্রে খবর, মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে জানা গেছে, পটনা থেকে ফোনে কথা বলা হয়েছিল। যে সিমটি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি হুগলির কোনও মহিলার নামে।
যদিও, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
করোনাকালে দেশে যেমন যেমন অক্সিজেন সঙ্কট বৃদ্ধি পেয়েছে, সেইমতো পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনলাইনে অক্সিজেন প্রতারণা-চক্র।
চারদিকে অক্সিজেনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে বহু মানুষ। তখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে শয়ে শয়ে ফোন নম্বর।
কোথায় মিলবে অক্সিজেন সিলিন্ডার? কে বাড়িতে পৌঁছে দেবেন অক্সিজেনের ক্যান? এরকম নানা লিঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক, হোয়াট্যসঅ্যাপে।
আর, সাহায্যের এই মোড়কের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে প্রতারণার ফাঁদ। সোশাল মিডিয়ায় এ ধরনের হাতছানিতে সাড়া দিলেই বিপদে পড়ছে মানুষ।
এধরনের প্রতারণা চক্র থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।