উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: এত নজিরবিহীন ঘটনা সাধারণত একসঙ্গে ঘটে না ।‌ তাও আবার বিধানসভায়। কিন্তু সবই ঘটলো সেখানেই। উপলক্ষ্য - বাজেট অধিবেশন।


শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন। বিধানসভার প্রথা অনুযায়ী বাজেট অধিবেশন শুরু হয় রাজ্যপালের ভাষণ দিয়ে। এক্ষেত্রে দেখা গেল রাজ্যপালের ভাষণ বাদ। কেন ? উঠলো প্রশ্ন। অধ্যক্ষ জানান, যেহেতু বিধানসভা নভেম্বর মাসের পর মুলতুবি করা হয়নি তাই রাজ্যপালের ভাষণ বাধ্যতামূলক নয় ।
১৯৫৬ সালে এরকম ঘটনা ঘটেছিল। তাই "নো বিতর্ক"।

দ্বিতীয় নজিরবিহীন ঘটনা, এবার রাজ্য বাজেট পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী নন। কারণ তিনি অসুস্থ। চিকিৎসকরা তাঁকে বাইরে বেরোতে বারণ করেছেন। তাই রাজ্যপালের অনুমতি নিয়ে বাজেট পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এর চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তৃণমূল বিধায়কদের সেকি হাততালি। ৯৪ পাতার বাজেট। এই বাজেটের আয়ু মাত্র চার মাস। কারণ সব ঠিক থাকলে মে মাসের মধ্যে তৈরি হবে আবার নতুন সরকার । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি আবার ফিরেও আসেন তাহলে তিনি এই বাজেট রাখতে পারেন আবার বদলেও দিতে পারেন। আর অন্য কেউ সরকার করলে এ বাজেট যে বদলে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এমনটাই হয়ে চলেছে। তাই এর পোশাকি নাম "ভোট অন একাউন্ট"।

কিন্তু বাজেট বলে কথা তাও আবার ভোটের ঠিক মুখে। তাই এই ইস্যুকে কেইবা ছাড়ে। ৯৪ পাতার মধ্যে ১৪৮টা প্রতিশ্রুতি। দেড় কোটি যুবকের চাকরি। প্রচুর শিল্পভাবনা। সব শিল্প ভাবনা যদি কার্যকরী হয় তাহলে একেকটা জেলায় প্রায় তিন চারটে করে কারখানা। রাস্তা আর উড়ালপুলে ভর্তি বাজেট। 18 থেকে ২০ টা উড়ালপুল । রাস্তা অসংখ্য। পাইকপাড়া থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত এস্কেলেটর।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বলা যায় এ রাজ্যে আগামী দিনে বেকার থাকবে না, রাস্তার সমস্যা থাকবে না, কারখানার ধোঁয়ায় আবার কালো হয়ে যাবে আকাশ, পিচ গলা রাস্তা দিয়ে ছুটে যাবে গাড়ি, উড়ালপুল থাকায় উধাও হবে জাম ও। সত্যি যেন স্বপ্নের কলকাতা।

এখানেই শেষ না, দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠলে ই একটা একটা ট্যাবলেট ফ্রী। বিনা পয়সায় রেশন। ৬০ বছর হয়ে গেলেই পেনশন। সত্যি তুলনা হয়না। নেতাজিও স্থান পেয়েছে বাজেটে। ভিক্টোরিয়ার ঘটনার পর জয় শ্রীরাম নিয়ে যখন তুমুল শোরগোল, সেসময় ৫০০ কোটি টাকা রাখা হলো শুধু নেতাজির জন্য। অনেক কিছু করা হবে।
সরকারি দলের বিধায়কদের দাবি,স্বাধীনতার পর এমন বাজেট করার সাহস কেউ দেখাননি । তাই এই বাজেট ই হবে নির্বাচনী প্রচার এর এক নম্বর হাতিয়ার। ভাবুন আরও একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা হয়ে গেল। ইশতেহার লেখার কাজ অনেকটাই কমে গেল।
অনেকদিন আগে একটা গল্প শুনেছিলাম। ভোট আসছে। গ্রামের মানুষদের ভোট পেতে হবে। তাই দেদার খাওয়া-দাওয়া চলছে। খাওয়া-দাওয়ার পর কোল্ডড্রিংস। ছিপি খুললেই ফোঁস করে বেরিয়ে আসে। গ্রামের এক বৃদ্ধ সাতদিন ধরে খেয়েছেন, তার তো দারুণ আনন্দ। কি সুন্দর ঢেকু্র উঠে যায়। ভোট দিতে যাওয়ার আগেও একটা খেয়ে গেলেন ভোটেল লাইনে। ভোট দিয়ে এসেই আবার একটা কোল্ড্রিংসের বোতল হাতে তুলে নিলেন। তারপর অনেক ঝাঁকিয়ে খোলার পর দেখা গেল কোন ফুসফাস আওয়াজই করে না। গ্রামের সেই বৃদ্ধ ওদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কি গো বাপু আওয়াজ করে না? লোকটি হেসে উত্তর দিলেন, ভোটের পর আর আওয়াজ করে না।