কলকাতা: শাসক-বিরোধী তুমুল দ্বন্দ্বে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় ধুন্ধুমার হয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি নিয়ে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান কটাক্ষ করায় ওয়েলে নেমে তুমুল বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল বিধায়করা। পাল্টা বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরাও। মান্নানকে সতর্ক করেন অধ্যক্ষ। পরে বিরোধী দলনেতার বিতর্কিত মন্তব্যগুলিও সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

 

 

এদিন রাজ্যপালের ভাষণের উপর বলতে উঠে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেন বিরোধী দলনেতা। কটাক্ষের সুরে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অনেক গুণের অধিকারী। তিন আঁচড়ের দাম দশ লাখ টাকা। একটা ছবি বিক্রি হয় ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায়। তিনি এ কথা বলতেই তৃণমূল বিধায়করা প্রায় রে রে করে ওঠন। শুরু হয়ে যায় তুমুল হইচই। এরপর ফের মান্নান বলেন, তৃণমূলের একজন নতুন বিধায়ক মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি এক সময় বলতেন, কালীঘাটের ময়না সত্য কথা কয় না।

এতে পারদ একেবারে তুঙ্গে ওঠে। এবার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল বিধায়করা। মান্নানের দিকে তেড়ে যান তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার। তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর হাতাহাতিও শুরু হয়ে যায়। তৃণমূল বিধায়ককে ঠেকান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এই তুমুল হইচইয়ের মাঝেই বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী কিছু বলতে গেলে তাঁর দিকেও তেড়ে যান মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বেশ কিছুক্ষণ ধরে এই হই-হট্টগোল চলে।

 

রাজ্যপালের বক্তৃতার উপর আলোচনায় এ দিন শেষ বক্তা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলতে উঠে বিরোধীদের পাল্টা জবাব দেন। দাবি করেন, আমরা বিজেপির সঙ্গে কোনও জোট করিনি। আমরা এনডিএর শরিক ছিলাম। বাজপেয়িজিকে শ্রদ্ধা করতাম। তাই এনডিএ-র সঙ্গে গিয়েছিলাম। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছিলাম কারণ আমরা কংগ্রেসের স্বাভাবিক বন্ধু। এরপর বাম-কংগ্রেস জোটকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, যত খুশি জোট করুন। এক মাসও হয়নি, ফলাফল বেরোতে না বেরোতেই আপনাদের এত অহঙ্কার, ঔদ্ধত্য! বিধানসভায় দাঁড়িয়ে আপনারা হুমকি দিচ্ছেন! ভোটের সময় যা ইচ্ছে তাই তো বলেছেন। আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আপনারা আমাকে চোর-ডাকাত-চরিত্রহীন পর্যন্ত বলেছেন। তারপরও তো মানুষ আপনাদের পরাস্ত করেছে। কিন্তু আমি কখনও সনিয়া গাঁধীকে নিয়ে এ সব কথা বলব না। জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে এ ধরনের কথা আমি কখনও বলিনি। এটা আপনাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা।

 

এর আগে জোটের পক্ষে সরব হয়েছিলেন মান্নান। বিরোধী দলনেতা বলেন,   প্রকাশ্য জোট করেছি। জোট থাকবে।

তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি দাবি করেন, তৃণমূলের মুখে বাম-কংগ্রেস জোট নীতিহীন, আদর্শহীন - এ সব কথা মানায় না। কারণ তৃণমূল নিজেই কখনও বিজেপির সঙ্গে জোট করেছে, কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে।

 

মান্নান এরপর মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতেই তৃণমূল বিধায়করা তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দাবি করেন, বিরোধী দলনেতাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অধ্যক্ষও মান্নানকে সতর্ক করে বলেন,  বিধানসভার ভিতর এমন কোনও পরিবেশ তৈরি করবেন না যাতে উত্তেজনা তৈরি হয়। রাস্তার গলিতে দাঁড়িয়ে যা বলা যায়, তা বিধানসভায় বলা যায় না।

 

সব মিলিয়ে রাজ্যপালের বক্তৃতার উপর আলোচনা এ দিন শেষ হল শাসক-বিরোধী চরম চাপানউতোরের মধ্যে দিয়ে।