কালনা (বর্ধমান): পূর্বস্থলীতে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে এই কিশোরকে থানায় নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অথচ ৪৮ ঘণ্টা পর জানা যাচ্ছে মোবাইল চুরির কোনও লিখিত অভিযোগ থানায় দায়েরই হয়নি! এই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের এই তৎপরতা তাহলে কীসের ভিত্তিতে?
সারা শরীরে অজস্র মারের দাগ আর মনে একরাশ আতঙ্ক নিয়ে ওই কিশোর এখন কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি। ১৪ বছরের ছেলেটির এই অবস্থার নেপথ্যে কি তাহলে পুলিশ ছাড়া অন্য কারও হাতও হয়েছে? পরিবার আঙুল তুলছে পূর্বস্থলীর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের দিকে। পূর্বস্থলী উত্তরের যোগেশ্বরপুর গ্রামের দিন আনি দিন খাই পরিবারটির দাবি, সোমবার বিকেলে পূর্বস্থলীর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় তাঁদের বাড়িতে এসে রক্তদান শিবিরের জন্য একশো টাকা চাঁদা চান।
কিন্তু, মাটি কেটে পেট চালানো পরিবারের কোনও কোনও দিন একশো টাকা আয়ই হয় না, তারা চাঁদা দেবে কোথা থেকে? অভিযোগ, সেকথা জানানোয় তাদের বলা হয় মিছিলে যেতে হবে। কিন্তু, মিছিলে গেলে তো আবার একদিনের আয়ের রাস্তা বন্ধ! পরিবারের দাবি, এর মধ্যেই ১৪ বছরের এই কিশোর প্রাক্তন বিধায়ককে বলে বসে, এলাকায় তো কোনও উন্নয়ন হয়নি। চাঁদা দেব কেন?
পরিবারের দাবি, এতেই রীতিমতো চটে যান প্রাক্তন বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগ, সবার সামনেই তিনি আঙুল উঁচিয়ে ওই কিশোরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। অভিযোগ, এই ঘটনার দু’ঘণ্টার মধ্যেই পূর্বস্থলী থানার পুলিশ এসে একটি মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে ওই কিশোরকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
ওই কিশোরের দাবি, থানায় পুলিশের মারধরের মুখে ভয়ের চোটে সে বলে ফেলে মোবাইল ফোনটি পুকুরে ফেলে দিয়েছে। অভিযোগ, এরপর রাত দশটা নাগাদ অন্ধকারের মধ্যে ওই কিশোরকে পুকুরে নামানো হয়। সঙ্গে তার বাবাকেও। কিন্তু, সেখানে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু মেলেনি।
কিন্তু, পুলিশ সেখানেও ক্ষান্ত দেয়নি। অভিযোগ, এরপর পাশে একটি ইটের পাঁজার কাছে তাদের নিয়ে গিয়ে মোবাইল ফোন খুঁজতে বলা হয়। না মেলায় এই কিশোরকে ফের আমগাছে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
ওই কিশোরের বাবার দাবি, এরপর তাঁদের ফের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত বারোটা নাগাদ সেখানে পুলিশের কাছে একটি ফোন আসে। তারপরই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসডিও-র কাছে পুরো বিষয়টি অভিযোগ আকারে জানিয়েছে ওই কিশোরের পরিবার। যদিও, প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের অতিসক্রিয়তা নিয়েও। অনেকেরই প্রশ্ন, চুরির অভিযোগ থাকলে পুলিশ ওই কিশোরকে গ্রেফতার করল না কেন? মামলা করল না কেন? মোবাইল চুরির কোনও লিখিত অভিযোগই যদি দায়ের না হয়ে থাকে তাহলে কিসের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিল পুলিশ?
যদিও, পূর্বস্থলী থানার ওসি সোমনাথ দাসের দাবি, মোবাইল ফোন চুরির মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম। তার ভিত্তিতে ওই কিশোরকে এনে কাউন্সেলিং করা হয়। মারধর করা হয়নি।
পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ ব্যাপারে কালনার মহকুমাশাসক নিতিন সিঙ্ঘানিয়ার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাচ্চাকে মারা ঠিক হয়নি। বিডিও এবং এসডিপিওকে বলেছি বিষয়টি দেখতে।
এদিকে, এই ঘটনার পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরপ করেছে যে, দলনেত্রীর নির্দেশও কী করে অমান্য করছেন নেতারা? কারণ, গত ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, মানুষের বিরুদ্ধে কোনও কাজ করা চলবে না। কারও থেকে টাকা তুলে দল চালানো যাবে না। তৃণমূল নেত্রীর এই নির্দেশের পরও একটা গরীব পরিবারের কাছ থেকে তৃণমূলের কর্মসূচির জন্য চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠল কী করে পূর্বস্থলীর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে? খোদ দলনেত্রীর টাটকা নির্দেশই কি তাহলে অমান্য করার সাহস দেখাচ্ছেন তপন চট্টোপাধ্যায়?
কালনার ঘটনায় এই নাবালককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে! নেপথ্যে না কি প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের অঙ্গুলিহেলন রয়েছে! কিন্তু, কয়েকদিন আগে পুলিশকেও তো রাজনীতির রং না দেখে কাজ করার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন, তাহলে কি খোদ পুলিশমন্ত্রীর বার্তাও অমান্য করছে কালনার পুলিশ?