কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : নিউটাউন কাণ্ডের পর ফের একবার ভাড়াটিয়া তত্ত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন বর্ধমানের উল্লাস উপনগরীর বাসিন্দারা। উপনগরীর  বিশাল অংশের বাড়িতেই থাকেন ভাড়াটিয়ারা। নিয়ম অনুযায়ী, ভাড়াটিয়ার যাবতীয় তথ্য উপনগরীর সোসাইটি ও লোকাল থানার কাছে দেওয়ার কথা থাকলেও থাকলে তা মানা হচ্ছে না বলেই জানালেন সোসাইটি কর্তারা। তাদের মনে আশঙ্কার মেঘ তৈরি করেছে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের স্মৃতি।


২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড় কেঁপে উঠেছিল বিস্ফোরণে। যা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল বাংলা থেকে গোটা দেশ। বিস্ফোরণের তদন্তের সময়ও সামনে উটে এসেছিল ভাড়াটিয়া তত্ত্ব। তারপরই জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, বাড়ি ভাড়া দিলে ভাড়াটিয়ার সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় জানাতে হবে বাড়ির মালিককে। কিন্তু সেই নির্দেশ খাতায় কলমেই থেকে গেছে তা উল্লাস উপনগরীতে থাকা আবাসিকদের কথাতেই স্পষ্ট। যদিও অতিরিক্ত জেলাশাসক সাধারন অনির্বাণ কোলে জানিয়েছেন আমরা পৌরসভা এবং পুলিশ কে নির্দেশ দিচ্ছি যাতে দ্রুত যেন যাবতী তথ্য সংগ্রহ করা হয়।


উল্লাস উপনগরীর বাসিন্দাদের দাবি, ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন অনেকেই। আর তথ্য নিয়ে ধোঁয়াশার জেরের মাঝে আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে নিউটাউনকাণ্ড। যেখানে কয়েকদিন আগেই পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টারকে শুটআউটে এনকাউন্টার করেছে পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে, ভাড়াটিয়া নিজে অন্য একজনকে ভাড়ায় থাকতে দিয়েছিলেন ফ্ল্যাটে। যে তথ্যের পর নিরাপত্তা নিতে তাদের বিক্ষোভও দেখিয়েছেন নিউটাউনের আবাসনের বাসিন্দারা।


বর্ধমানের উল্লাস উপনগরীর বাসিন্দাদের দাবি, ২০১৯ সালে সোসাইটির পক্ষ থেকে ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হলেও তার পরে আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই উপনগরীতে মোট ৯৪৮ টি প্লট আছে। ৩৬ টি কমার্শিয়াল ও ২ টি গ্রুপিং হাউজিং কমপ্লেক্স ও আছে।এখনও পর্যন্ত ৫০০ টি প্লটে বাড়ি হলেও বাকি প্লটগুলি রয়েছে ফাঁকাই পড়ে।


বর্ধমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর প্রশাসনিকভাবে তৎপরতা তৈরি হয়েছিল ভাড়াটিয়াদের নথি সংগ্রহের ক্ষেত্রে। এখনও সেই নিয়ম বলবৎ থাকলেও কার্যত নিয়ম মানার কোনও বালাই নেই বলেই অভিযোগ উল্লাস উপনগীর বাসিন্দাদের। উল্লাস ডেভেলপমেন্ট এন্ড কালচারাল সোসাইটির সম্পাদক লক্ষীনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বাড়ির মালিকরা আগে তথ্য দিলেও,বর্তমানে আর দেন না। ২০১৯ সালে শেষবারের মত ভাড়াটিয়াদের তথ্য নেওয়া হয়েছিল।


তাছাড়াও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এবার থেকে উল্লাস উপনগরীর বাসিন্দাদের জন্য কার পাস করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও বাড়ানো হবে। উল্লাস উপনগরীর বাসিন্দাদের দাবি নিউটাউনের ঘটনার জেরে তারা যেমন আতঙ্কিত। সব ভাড়াটিয়ার তথ্য না থাকায় কোনও দুষ্কৃতী লুকিয়ে রয়েছে কি না সে নিয়ে ফের চিন্তিত তারা।