কলকাতা:রথযাত্রা নিয়ে হাইকোর্টে ধাক্কা খেল বিজেপি। এই কর্মসূচির অনুমতি দিল না আদালত।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এদিন সাফ জানিয়ে দেন, ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও মিছিলই করা যাবে না।
অর্থাৎ এই নির্দেশের ফলে বিজেপির তিনটি রথযাত্রার কর্মসূচিই আপাতত বিশ বাঁও জলে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এদিন নির্দেশ দিতে গিয়ে বলেন,২১ ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত জেলার পুলিশ সুপাররা জেলা বিজেপি সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এই কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবেন। তার ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করবে। ৯ জানুয়ারি এনিয়ে পরবর্তী শুনানি।
প্রশাসন সাড়া দিচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য বিজেপি। বৃহস্পতিবার অ্যাডভোকেট জেনারেল মুখবন্ধ খামে কোচবিহারের পুলিশ সুপারের রিপোর্ট পেশ করেন। তিনি বলেন, পুলিশ সুপার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই মিছিল করতে দেওয়া যাবে না। আমরা এই আবেদন খারিজ করছি।
এরপর দুপুর বারোটায় ফের শুনানি শুরু হলে কোচবিহারের পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের বক্তব্য পেশ করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। পুলিশ সুপারকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন,কোচবিহার স্পর্শকাতর জেলা। আগেও এখানে অশান্তি হয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আছেন। অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় গোরক্ষার নামে যে তাণ্ডব দেখা যাচ্ছে, সেটা নিয়ে আশঙ্কার জায়গা থাকছে।এরপর জেলাশাসককে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এই কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতারা আসবেন। তাঁদের সঙ্গীরা থাকবেন। এর আড়ালে উস্কানিদাতারা থাকতে পারে। এসমস্ত কারণেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।


বেশ কিছুক্ষণ পর ফের শুনানি শুরু করে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, ডিজি ও আইজি-র কাছে বিজেপি প্রথম চিঠি লিখেছিল ১৪ নভেম্বর। এতদিন পর্যন্ত অফিসাররা চুপ করে বসেছিলেন কেন? তারা যদি তখনই বিষয়টি জানাতেন, তাহলে এই পরিস্থিতি না-ও তৈরি হতে পারত। এর জন্য আপনারাই দায়ী।
রাজ্য পুলিশের ডিজি ও আইজি-র পক্ষের আইনজীবী তখন প্রশ্ন করেন,যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে কে দায়ী থাকবে? বিজেপির কোন নেতা দায়ী থাকবেন? সামগ্রিকভাবে কার ঘাড়ে দায় বর্তাবে?
তখন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য আবেদনকারী ও পুলিশ প্রশাসন প্রত্যেকেই দায়ী। কেউ সময়মতো কাজ করেননি। তবে আমি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত।
এরপর বিচারপতি আরও বলেন, কোনও আইন দিয়ে এধরনের মিটিং-মিছিলকে আটকানো যায় না। যতক্ষণ না সেটা সাধারণ মানুষের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা দেখতে হবে পুলিশকেই। এটা কোনও দু-একদিনের মিছিল নয়। একমাসের বেশি সময় ধরে তা চলবে। আদালত যাই নির্দেশ দিক, তাকে অনেকগুলি বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে। কোনও এক আইনজীবী যদি বলেন, গন্ডগোল হলে তিনি দায়ী থাকবেন, সেটা কি রায় দেওয়ার জন্য উপযুক্ত কারণ হতে পারে?

হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে রথযাত্রার অনুমতি না পেয়ে বিজেপি নেতারা যান প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তর এজলাসে। সূত্রের খবর, তাঁরা বলেন, গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত এই মামলার শুনানি করা হোক। কিন্তু, প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রধান বিচারপতি তাঁদের বলেন, শুক্রবার সকালে বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। তারপর তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
লোকসভা ভোটের আগে রথযাত্রা কর্মসূচিকে হাতিয়ার করে ভোটব্যাঙ্কে ডিভিডেন্ড তোলার আশা করছিল বিজেপি। কিন্তু, এখন মামলার ফাঁসে তাদের রথের চাকা কতদিন আটকে থাকবে, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।