কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল বৈঠকের পর কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। জানালেন, বৈঠকে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে একটাও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শুধু নিজের কথা বলে গেলেন। মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন, বৈঠকে ডেকে কথা বলতে না দিয়ে অপমান করা হয়েছে। 


করোনা মোকাবিলায় এদিন বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভার্চুয়াল বৈঠকে ১০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ডাকা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন বহু জেলাশাসকও। নারদ-সংঘাতের আবহেই ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। পাশাপাশি, রাজ্যের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিবও। 


সেই বৈঠকে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘সচিবদের নিয়ে আমি উপস্থিত ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকে একটি কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। কোভিড নিয়ে বৈঠক কেন এত ক্যাজুয়াল হবে? আমরা মুখ্যমন্ত্রীরা অপমানিত।’


এখানেই থেমে থাকেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীদের পুতুলের মতো বসিয়ে রাখা হয়েছিল। ওষুধ-অক্সিজেনের অবস্থা নিয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করেননি।’ তিনি ।যোগ করেন, ‘ভেবেছিলাম আমাদের বলতে দেওয়া হবে। আমরা ক্রীতদাস নই। বৈঠকে ওয়ান ওয়ে ইনসাল্টেশন, হিউমিলিয়েশন হয়েছে।’


দেশের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে নাম না করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকেও কটাক্ষ করেন তিনি। বললেন, ‘ভাষণে উনি বললেন করোনা নাকি কমে গিয়েছে। এই অবহেলার জন্যই করোনা বেড়ে গিয়েছিল।’ তাঁর প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী কেন এত ইনসিকিওর্ড, মুখ্যমন্ত্রীদের কথা কেন শোনেন না?’


মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রের কাছে ভ্যাকসিন নিয়ে যে দাবি করা হয়েছিল, সেই দাবি পূরণ করা হচ্ছে না। বললেন, ‘তিন কোটি ভ্যাকসিন দিতে বলেছিলাম, কমিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্র অক্সিজেন দিচ্ছে না, রেমডিসিভির কেন বাজারে নেই?’ তিনি জানিয়ে রাখলেন,  রাজ্যের চাহিদা পূরণ হলে, তিনমাসের মধ্যে সকলকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেওয়া হবে।  


সেন্ট্রাল ভিস্তা নিয়ে ফের তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘সব কেন্দ্রের হাতে, কোনও রাজ্যকে পয়সা দিচ্ছে না। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিলেই, সবাই পেত নিখরচায় ভ্যাকসিন। ১৮ বছরের ছেলেমেয়েরা মরছে, উনি বিল্ডিং বানাচ্ছেন! আবার না বলেন, ঘণ্টা বাজালেই করোনা কমবে!’


ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘বিহার ভোটের আগে বলেছিলেন, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেব। বাংলার ভোটের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দেন। এখন মুখ লুকিয়ে পালাচ্ছেন।’


ফের একবার মোদি-অমিত শাহকে একাসনে বসিয়ে আক্রমণ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুম্ভ-নিশুম্ভের মতো ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন। ভোটের পর হিংসা দেখতে দল পাঠাচ্ছে, ভ্যাকসিন আনতে পাঠিয়েছে?’


কেন্দ্রের ভ্যাকসিন নীতিরও সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘দেশ এখন অভূতপূর্ব সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্যাজুয়াল। প্রধানমন্ত্রীর ফর্মুলা মানলে, দেশে ভ্যাকসিন দিতে ১০ বছর লাগবে।’


ভ্যাকসিন নেওয়ার সময়সীমা বদল নিয়েও ক্ষোভ ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। বলেন,  ‘বারবার দুই ভ্যাকসিনের মধ্যে সময়সীমা পাল্টানো হচ্ছে। ভ্যাকসিন নেই বলে, বারবার সময়সীমা পাল্টাচ্ছে। ওরা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করছে।’