মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট, রাজস্থানে যা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। আমাদের রাজ্যের আফরাজুল খান নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। ওঁর পরিবার সহায়-সম্বলহীন। রাজ্য সরকার ওঁদের ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে। আফরাজুলের পরিবারের একজন চাকরি পাবে। সরকার অন্যান্য সাহায্যও করবে। আমি মন্ত্রী ও সাংসদদের পরিবারের কাছে পাঠাচ্ছি।’
আজ রাতেই তৃণমূলের সংসদীয় দল রওনা দিচ্ছে মালদায়। দলে থাকছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং সৌগত রায়। আজ মালদার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ববি হাকিম এবং শুভেন্দু অধিকারীও।
উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে জানিয়েছেন, অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। ভাবা যাচ্ছে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছি রাজস্থানের ডিজির সঙ্গে কথা বলতে। রাজ্যের সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক রাজস্থানে কাজ করেন। তাঁদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। মেয়েদের পড়াশোনার খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। এছাড়াও কোনও সুযোগ-সুবিধা চাইলে পাশে আছে রাজ্য।
এদিন কালিয়াচকের সৈয়দপুরে, নিহতের বাড়িতে যান মালদা জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। জেলাশাসকের ফোনে ফোন করে আফরাজুলের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানতে চান, পরিবারের কাকে চাকরি দেওয়া যায়।
রাজস্থানে বঙ্গ সন্তানের খুনের প্রতিবাদে কলকাতায় হাজরা থেকে গাঁধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত মিছিল করে যুব তৃণমূল কংগ্রেস।যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এরকম আগে দেশে হয়নি। এটাই প্রমাণ যে বিজেপি শাসিত রাজস্থানে আইনের শাসন নেই। এর দায় মোদী সরকার এড়াতে পারে না।
বিজেপি অবশ্য তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে। বঙ্গসন্তানের খুনের ঘটনায় সিপিএম একদিকে বিজেপিকে আক্রমণ করছে, অন্যদিকে তৃণমূলকেও বিঁধতে ছাড়ছে না। সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, তিন লাখ দিয়ে কী হবে? বিষমদেও তো দুলক্ষ দেয়। ফলাও করে বলার কী আছে।
সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, প্রকৃত সমস্যা থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতেই এভাবে ধর্মের নামে খুন করা হয়।
রাজস্থান হত্যাকাণ্ডকে হাতিয়ার করে বহরমপুরে মিছিল করে কংগ্রেস। নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে শনিবার মালদা যাবেন অধীর চৌধুরী।
রাজস্থানে খুনের প্রতিবাদে এদিন বীরভূমের সিউড়িতে মিছিল করে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল।
আরএসএস কার্যালয় ঘেরাও অভিযানকে ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় হেদুয়ায়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর। আহত হন বেশ কয়েকজন।
উল্লেখ্য, রাজস্থানে নৃশংসভাবে খুন করা হয় আফরাজুলকে। শুধু খুনই নয়, পুরো ঘটনার ভিডিও-ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়।
ভাইরাল ওই ভিডিও-য় দেখা যাচ্ছে, গাঁইতি দিয়ে এলোপাথারি কোপ। বারবার প্রাণভিক্ষার আর্জি। তাতেও থামল না খুনি! নেমে এল উপর্যুপুরী আঘাত! দেহ যখন আর নড়ছে না, তখনও চপারের পরপর কোপ! এখানেই শেষ নয়। দেহের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হল কেরোসিন! এরপর ছুড়ে দেওয়া হল দেশলাই কাঠি! বিজেপি শাসিত রাজস্থানে ফের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শিউরে উঠেছে সারা দেশ। গতকালই মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন।
এদিকে, আফরাজুলের খুনে অভিযুক্তকে তিনদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ রাজস্থানের আদালতের। গতকাল তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন রাজসমন্দ জেলায় মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তাকে পেশ করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট তার তিনদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। রাজনগর থানার স্টেশন হাউস অফিসার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত শম্ভুলাল রাইগারকে আগামী ১০ ডিসেম্বর ফের আদালতে পেশ করা হবে।
গতকাল পুলিশ রাইগরের নাবালক ভাইপোকেও আটক করে। সে ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডর ভিডিও তুলেছিল। তাকে এদিন আদালত জুভেনাইল হোমে পাঠিয়েছে।