সোমনাথ মিত্র, হুগলি: কৃষক বন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত হুগলি জেলার আড়াই লক্ষের বেশি চাষি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষতিপূরণ পাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে টাকা। শুক্রবার এমনটাই জানাল হুগলির কৃষি দফতর। প্রশাসনের এই ঘোষণায় চিন্তায় পড়েছেন প্রকল্পে নথিভুক্ত নন এমন কৃষক ও ভাগচাষিরা। যদিও, সবাইকেই ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।


ইয়াসের প্রভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির জেরে, হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্ষতি হয়েছে চাষের। গাছের গোড়ায় জল জমে, জমিতে নষ্ট হয়েছে ফসল। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, হুগলিতে মোট ১ হাজার ৯৭৩টি মৌজায় কৃষিতে আর্থিক ক্ষতি প্রকট। 


৪২ হাজার হেক্টর জমিতে তিল, ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম এবং ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট সহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। করলা, কচু, কপি, ঢ‍্যাঁড়স, টমেটো, ঝিঙে, মাঠেই নষ্ট হচ্ছে সবজি। সিঙ্গুর, তারকেশ্বর, হরিপালে কৃষকদের মাথায় হাত। 


হরিপালের কৃষক দিলীপ মালিকের কথায়, 'প্রায় পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিল চাষ করেছিলাম। এখন সেই জমিতে জলল জমে। সমস্ত গাছ  শুয়ে পড়েছে মাটিতে। শুধুমাত্র তিল চাষে ষোলো  হাজার টাকার ক্ষতি। কী ভাবে সামলাব বুঝতে পারছি না। উল্টে লিজের টাকা আছে।' এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কিছুটা সুরাহা দিতে জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে নথিভুক্ত হুগলি জেলার প্রায় ২ লক্ষ‍ ৬৮ হাজার কৃষক ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ পাবেন। 


সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত‍ ক্ষতিপূরণ মিলবে। এর জন‍্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কোনও আবেদন করতে হবে না। ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে নথিভুক্ত চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পৌঁছে যাবে টাকা। কিন্তু, যাঁরা অন‍্যের জমি লিজ্ নিয়ে চাষ করেছেন কিংবা যে কৃষকদের নাম নাম এখনও কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়নি, তাদের কী হবে? 


দিলীপ মালিক আরও জানিয়েছেন, 'গত বারেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল কিন্তু মেলেনি কিছুই অর্থ। এবারে যদি  সরকারি সাহায‍্য মেলে তাহলে কিছুটা সুরাহা হবে।'


হুগলি কৃষি আধিকারিক জয়ন্ত পাঁড়ুই জানিয়েছেন, যাদের নাম নথিভুক্ত নেই তাদের ডেকে নাম নথিভুক্ত করানো হচ্ছে। ১৮ই জুনের মধ‍্যে লিখিত আবেদন জমা দিতে পারেন। কৃষকবন্ধুতে নথিভুক্ত নন, অথচ ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এমন কৃষক ও ভাগচাষিরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন। জেলার প্রত‍্যেকটি ব্লকে কৃষি দফতরে একটি বাক্স রাখা হয়েছে। কৃষকেরা তাদের ক্ষতির যথাযথ প্রমাণ দিয়ে সেইবাক্সে আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন। আমফানের বছর ঘুরতেই রুটিরুজিতে ইয়াসের মার। অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারি ক্ষতিপূরণের দিকে তাকিয়ে হুগলির কৃষকরা।