মুর্শিদাবাদ:  আশি বছরের একাকী বৃদ্ধা। নির্জন ঘরে সবার অলক্ষ্যে, সবার অজান্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। মশারির ভিতরে পড়ে রয়েছে তাঁর মৃতদেহ।  


টের পাওয়া গেল বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বেরনোর পর। ছেলে থেকে প্রতিবেশী, করোনা আতঙ্কে কাছে ঘেঁষলেন না কেউ। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পড়ে রইল মৃতদেহ। শেষ পর্যন্ত পুলিশের তৎপরতায় ভ্যান রিকশ করে নিয়ে যাওয়া হল মর্গে।


মৃতের প্রতিবেশী দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, সবাই ভয় পাচ্ছে। আমরা ডাক্তারকে ফোন করি। ডাক্তারও পাওয়া যায়নি। যত সময় যায় তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। তারপর প্রশাসনের দ্বারস্থ হই। 


মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারের বাসিন্দা বাসন্তী চক্রবর্তী। একাই থাকতেন বাড়িতে। পাশের পাড়ায় থাকেন তাঁর ছেলে।  স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সকালে বৃদ্ধাকে শেষবারের মতো জীবিত অবস্থায় দেখেন তাঁর প্রতিবেশীরা। মঙ্গলবার বৃদ্ধার বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে তাঁদের সন্দেহ হয়। 


প্রতিবেশী বাসুদেব মণ্ডল বলেন, গতকাল দুপুরের পর থেকে গন্ধ পাচ্ছিলাম। বিকেলে জানালা দিয়ে দেখি বিছানায় মশারি টাঙানো। মাছি ভনভন করছে। তারপর ছেলেকে খবর দিই। করোনার ভয়ে আমরা এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাইনি।


বাসন্তী চক্রবর্তীর বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছিল। কিন্তু, তাঁর করোনা পরীক্ষা করানো হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মায়ের মৃত্যুর খবর ছেলেকে দেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু, মায়ের মৃতদেহের কাছে যায়নি তাঁর নিজের সন্তানও।  


মৃতার ছেলে দিলীপ চক্রবর্তী বলেন, নিজের কাজে ব্যস্ত। ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে যায়। মায়ের খবর নিতে পারিনি। বিকেলে একজন খবর দেয় মা ঘরে মরে পড়ে আছে। আমি তো একা সরাতে পারব না। তাই প্রতিবেশীদের সাহায্য চাই। কিন্তু তাঁদেরও কেউ আসেননি।


শেষপর্যন্ত বহরমপুর থানার পুলিশ মঙ্গলবার রাতে মৃতদেহ উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। 


গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৪২৮ জন। সোমবারের তুলনায় রাজ্যে বেড়েছে দৈনিক সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের। এনিয়ে টানা ১৫দিন একশোর গণ্ডি পেরলো মৃত্যু।