রঞ্জিৎ হালদার, সোনারপুর: সোনারপুর বেআইনি ভ্যাকসিন ক্যাম্প-কাণ্ডে ফের উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। নির্ধারিত সময়ের আগেই একাধিক জনকে  টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। এছাড়া যাঁরা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন তাঁরা যে তারিখে নিয়েছেন ,সেই দিনে নয়, অন্য তারিখে সার্টিফিকেট পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাঁরা প্রত্যেকেই টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন। 


যাঁরা মিঠুন মণ্ডলের কাছ থেকে টিকা  নিয়েছেন, এমন ৪৯ জনের তালিকা তৈরি করে সোনারপুরের সুভাষগ্রাম গ্রামীন হাসপাতালে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কারুরই  শারীরিক সমস্যা সেভাবে পাওয়া যায়নি। এই ক্যাম্পের  তদারকি করেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অনুপ মিশ্র ও ব্লক উন্নয়ন সমষ্টি আধিকারিক সৌরভ ধল্ল। নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে ৮৪ দিনের আগেই যাঁদের ডোজ সম্পর্ণ হয়ে গিয়েছে তাদের বিষয়টি স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অনুপ মিশ্র। স্বাস্থ্য দপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


সোনারপুরে বেআইনি ভ্যাকসিন ক্যাম্প-কাণ্ডে এর আগেও  চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চুরি করে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল ৪৫ জনকে। ধৃতের বাড়ি থেকে মিলেছে ৫০টি সিরিঞ্জ। বাজেয়াপ্ত হওয়া ভ্যাকসিনের গুণমান জানতে পাঠানো হয়েছে ল্যাবে।


জানা গেছে, ৩০ নয়...চুরি করে ৪৫ জনকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল।এপ্রিল-মে মাস থেকেই চলছিল এই কারবার।ভ্যাকসিন বহনের জন্য অনলাইনে কেনা হয়েছিল বক্স।পুলিশ সূত্রে দাবি, সোনারপুর ভ্যাকসিনকাণ্ডে তাদের হাতে উঠে এসেছে এরকমই চাঞ্চল্যকর তথ্য। 


উল্লেখ্য,  ডায়মন্ডহারবার থেকে ভ্যাকসিন চুরি করে, সোনারপুরে টাকার বিনিময়ে তা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে মিঠুন মণ্ডলকে। যিনি ডায়মন্ড হারবারের পঞ্চগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট।একইসঙ্গে মশাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিন কোঅর্ডিনেটর হিসেবেও কাজ করতেন।


পুলিশ সূত্রে আগে দাবি করা হয়, ধৃত ফার্মাসিস্ট এবং ৬ স্বাস্থ্যকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, সরকারি রেকর্ডে কারচুপি করে ৩০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু রবিবার ধৃতকে নিয়ে মশাটের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তল্লাশি চালানোর সময় নতুন তথ্য পায় পুলিশ। সূত্রের দাবি, উদ্ধার হওয়া রেজিস্টার খতিয়ে দেখে জানা যায়, ৩০ নয়, ৪৫ জনের নাম রয়েছে সেখানে। অর্থাৎ ৪৫ জনকে টাকার বিনিময়ে চুরি করে আনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল।প্রত্যেকেই সোনারপুরের বাসিন্দা।সেই তালিকা নিয়ে ভ্যাকসিন গ্রাহকদের খোঁজ করতে নামে পুলিশ। সোনারপুরের রূপনগর, সুভাষগ্রাম, জগদীশপুরে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি যায় তারা। 


ডায়মন্ড হারবারের মশাট থেকে সোনারপুরের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার।প্রশ্ন হল, এতটা পথ কীভাবে আনা হয়েছিল ভ্যাকসিন? ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এখানেও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, চুরি করা ভ্যাকসিন আনার জন্য অনলাইনে ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার বক্স কিনেছিলেন মিঠুন। সেটিও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ধৃতের বাড়ি থেকে মিলেছে ৫০টি সিরিঞ্জ।কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর ভ্যাকসিনের গুণমান ঠিক ছিল তো? তা জানতে বাজেয়াপ্ত হওয়া ভ্যাকসিন, পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।