দার্জিলিং ও নয়াদিল্লি: আবারও অশান্তির আগুন পাহাড়ে। বিমল গুরুঙ্গের আস্তানায় ঢুকে তল্লাশি অভিযান পুলিশের। প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাহাড় বনধের ডাক মোর্চার। পাতলেবাসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথড়। পাল্টা লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস পুলিশের। রাজ্যের আর্জি মেনে পাহাড়ে চার কোম্পানি আধা সেনা পাঠাল কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দার্জিলিঙে পারদ একেবারে তুঙ্গে ছিল। ঘটনার সূত্রপাত হয় বিমল গুরুংয়ের আস্তানা পাতলেবাসে পুলিশের অভিযান ঘিরে। এদিন সকালে পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন আইপিএস অফিসার এবং পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী পাতলেবাসে পৌঁছয়। শুরু হয় গুরুংয়ের আস্তানার দরজা ভাঙা। একে একে উদ্ধার হয় প্রচুর তির-ধনুক, ছুরি, কুকরি, কাটারি, ভোজালি, কোদাল। পুলিশের দাবি, উদ্ধার হয় বিস্ফোরকও।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি দাবি করেন, স্কুলের অনুষ্ঠানের জন্য তির ধনুক কেনা হয়েছিল। পুলিশের আরও দাবি, গুরুংয়ের আস্তানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ওয়্যারলেস রেডিও সেট, নাইটভিশন বাইনোকুলার এবং ড্রাগন লাইটও উদ্ধার হয়েছে।



গুরুংয়ের ডেরায় অভিযান শেষ করে পুলিশ যখন সিংমারির দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে মোর্চা। পাকদণ্ডী বেয়ে শুরু হয় মোর্চা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ। মোর্চা সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল মারলে পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশও। মোর্চার দিক থেকে ধেয়ে আসা পাথরের টুকরোর পাল্টা পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল।
এরইমধ্যে একটি সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। কালো ধোয়ায় ভরে যায় আকাশ। পুলিশের দাবি, তাদের লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ছোঁড়া হয়েছে। গুলি চালানোর খবর মিলেছে। পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার জাভেদ শামিম বলেন, পুলিশ দুটি পেট্রোল বোমা সিজ করেছে। ২ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। আরেক দায়িত্বপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে বলে শুনেছি। খতিয়ে দেখছি।



এদিকে এই প্রেক্ষাপটেই পাহাড়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিন মোর্চার জঙ্গি আন্দোলন আগে থেকে আঁচ করতে না পারার জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, গোয়েন্দারা ব্যর্থ। দুঘণ্টা ধরে আন্দোলন করেছে। প্রচুর শেল ফাটিয়েছে। মেয়েদের মেরেছে। রাজ্য সরকারকে পাল্টা আক্রমণ করে বৃহস্পতিবার মোর্চা দাবি করেছে, পুলিশি অভিযানের সময় বিমল গুরুংয়ের গাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে তাঁর বাড়িতে।
মোর্চা নেতা বিনয় তামাং প্রেস বিবৃতিতে দাবি করেছেন, সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে আগুন লাগিয়েছে প্রশাসনের লোকেরা। তল্লাশি অভিযানের সময় সাদা পোশাকে থাকা প্রশাসনের লোকেরা বাড়িতে ভাঙচুর করে। পরে তারাই মোর্চা সভাপতির একটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং ভাঙচুর করে। প্রশাসনের তরফে অবশ্য মোর্চার এই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।



এদিকে, দার্জিলিঙের আগুন ছড়িয়ে পড়ে কালিম্পং, কার্শিয়ংয়েও। শিলিগুড়ি থেকে বিজন বাড়ি যাওয়ার পথে আপার পাগলাঝোড়ার কাছে এনবিএসটিসি-র একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় মোর্চা সমর্থকরা। অশান্তির আগুন জ্বলেছে কালিম্পংয়েও। সেখানে রাজ্য সরকারের সেরিকালচার অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কালিম্পঙের পেডং পুলিশ আউটপোস্টেও মোর্চা সমর্থকরা আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কালিম্পঙের হিল টপ গেস্ট হাউসেও আগুন লাগানোর চেষ্টা করে বনধ সমর্থকরা। কিন্তু শেষমেশ তারা তা পারেনি।
এ দিন কালিম্পঙের পেডঙে পুলিশ আউটপোস্টে আগুন লাগানোর ঘটনায় বিনোদ প্রধান নামে এক মোর্চা নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার আগে কার্শিয়ঙে গ্রেফতার করা হয় মোর্চা নেত্রী করুণা গুরুঙ্গকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েকজন গুণ্ডামি করছে। শুধু আমি খাব, অন্য কেউ নয়, এটা হতে পারে না।




এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের দাবি মেনে এদিন আরও ৪ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী পাহাড়ে পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্র। এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানান, দার্জিলিঙের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও চার কোম্পানি আধাসেনা পাঠানো হল। এই নিয়ে পাহাড়ে মোট ১৪০০ আধাসামরিক বাহিনী পাঠাল কেন্দ্র। এর আগে, ১০০০ জন জওয়ান, যাঁদের মধ্যে ২০০ জন মহিলা জওয়ানও আছেন-- দার্জিলিঙে পাঠায় কেন্দ্র।