কলকাতা: রাজ্যজুড়ে এখন আতঙ্কের অপর নাম ডেঙ্গি!মশাবাহিত এই রোগে রোজই প্রিয়জনকে হারাচ্ছে একের পর এক পরিবার। আর এই প্রেক্ষাপটে বিরোধীরা যখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলছে, তখন কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলার প্রেক্ষিতে ডেঙ্গি নিয়ে নতুন তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করল সরকার। তাদের দাবি, রাজ্যে পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপের জন্য সম্ভবত দায়ী রাজ্যবাসীর বেড়াতে যাওয়া!

বৃহস্পতিবার আদালতে হলফনামা পেশ করে রাজ্য সরকার দাবি করেছে, সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে পতঙ্গবাহিত রোগে মৃতের সংখ্যা ছিল ৫। তারপর থেকেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।

এরপরই হলফনামায় নতুন তত্ব খাড়া করার চেষ্টা করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, ছুটির মরসুমে মানুষ ভিনরাজ্যে বেড়াতে যান। রাজ্য লাগোয়া বিভিন্ন দেশের সীমান্তবর্তী মানুষেরও সংস্পর্শে আসেন। হলফনামায় দাবি, এভাবেও না কি পতঙ্গবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন এ রাজ্যের মানুষ! তবে, শুধু ঘুরতে যাওয়াকেই যে ঘুরিয়ে দায়ী করা হয়েছে, তা নয়,   রাজ্য সরকারের হলফনামায়, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেও পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপের জন্য দায়ী করা হয়েছে। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে বেড়াতে যাওয়ার তত্ত্ব শুনে বিরোধীরা স্তম্ভিত!

কংগ্রেস নেতা  ঋজু ঘোষাল বলেছেন, সরকার না চালিয়ে সায়েন্স ফিকশন লেখা উচিত। ব্যর্থতা ঢাকতে কল্পকাহিনী তৈরি করছে সরকার।

বামেদের গলাতেও শ্লেষের সুর। সিপিএম নেতা রবীন দেব বলছেন, অপদার্থ সরকার। আষাঢ়ে গল্প ফাঁদছে। মমতাও তো বম্বে ঘুরে এলেন। ওঁকেও পরীক্ষা করা হোক, জীবাণু এনেছে কিনা।

তৃণমূল অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সেভাবে মুখ খুলতে চায়নি।

কিন্তু, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মোট কতজনের মৃত্যু হয়েছে? সরকারের হলফনামায় দাবি করা হয়েছে,জানুয়ারি থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ হাজার ১৩৫ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন। আর এরপরই চমকপ্রদ এক তথ্য দিয়ে সরকার দাবি করেছে, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া সত্ত্বেও ১৯জনের মৃত্যু হয়েছে।

আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, সরকার ঘুরিয়ে বোঝাতে চেয়েছে, সরকারি হাসপাতালে ১৯জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, কোথাও সরকারি হাসপাতাল শব্দটি ব্যবহার করেনি, কারণ, তাহলেই প্রশ্ন উঠবে বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে কতজনের মৃত্যু হয়েছে? আর এই প্রেক্ষাপটেই কদিন আগে ডেঙ্গিতে মৃত্যু প্রসঙ্গে মুখ্যসচিবের বক্তব্যের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৩৪-৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজেপি বরাবরই দাবি করে আসছে, ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা লুকোচ্ছে রাজ্য সরকার।

উত্তর ২৪ পরগনায় দেগঙ্গায় জ্বরে একাধিক জনের মৃত্যু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে, বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রথমে দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও তারপর বারাসাত সদর হাসপাতালে যান। বারাসতে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে ঢুকতে গেলে তাঁর সঙ্গে পুলিশের একপ্রস্ত ধস্তাধস্তিও বাধে।