বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: স্বামী গত হয়েছেন প্রায় ৩০ বছর আগে। ৩ ছেলের প্রত্যেকেই কাজের সূত্রে ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। কোনও ছেলের সংসারেই ঠাঁই হয়নি সত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ের। এদিকে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে মেলেনি বিধবা ভাতাও। সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি পেতে একাধিকবার আবেদন করেছেন। তাতেও কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি। ফলে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে পাঁশকুড়ার সত্তর বছরের নিরুপায় বৃদ্ধা বাসন্তী দাসের। 


কয়েকদিন আগেই কলকাতার সিঁথি এলাকার অসহায় বৃদ্ধার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল আমাদের সকলকেই। এবার কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিমি দূরেও ঠিক একই রকম ছবি ধরা পড়ল। একাকী বৃদ্ধার নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। পাঁশকুড়ার নস্করদীঘি বাসিন্দা বাসন্তী দাসের সম্বল বলতে শুধু মাটির একটা ভাঙাচোরা বাড়ি। খাবার বলতে রেশনে পাওয়া চাল। বাড়ির আশেপাশের জমি থেকে শাকপাতা, বেলপাতা তুলে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে যা একটু-আধটু রোজগার হয় তাতেই কোনওরকমে সংসার চালান বৃদ্ধা। কিন্তু বয়সের ভার এতই যে এখন তাও প্রত্যেকদিন করা সম্ভব হয় না। 


বাসন্তী দেবীর অভিযোগ, তিনি বিধবা ভাতা পাওয়ার জন্য একাধিকবার স্থানীয় পঞ্চায়েতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সাহায্য বা সুবিধা পাননি। এমনকী আর্থিক অনটনের জেরে ভাঙাচোরা বাড়িটিও সারাতে পারছেন না। তাই সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি পেতে একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু বৃদ্ধার কোনও আবেদনেই কেউ কর্ণপাত করেনি। এই অভিযোগ সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। 


গোটা ঘটনায় প্রশাসনকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। 'এই সরকারের আমলে কাটমানি না দিলে যে কোনও কাজই হয় না, তা আরও একবার প্রমাণিত হল,' তোপ পূর্ব মেদিনীপুরের- জেলা যুব মোর্চার সভাপতি প্রতীক পাখিরার। যদিও বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঘাসফুল শিবির। তৃণমূল পরিচালিত পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন মালিকের বক্তব্য, 'বিষয়টি জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখছি। বিজেপির অভিযোগ ভিত্তিহীন।' তবে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক। 'আগামী ১৬ অগাস্ট থেকে "দুয়ারে সরকার" প্রকল্প শুরু হচ্ছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বৃদ্ধাকে সহায়তা দেওয়া হবে,' জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্নেন্দু মাজি।